ডেস্ক রিপোর্ট।।
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ৫০ জনের বেশি মন্ত্রী নিখোঁজ হয়েছেন। ইমরান খানের দলেরও ওই মন্ত্রীদের গত কয়েক দিন ধরে জনসম্মুখে দেখা যাচ্ছে না বলে শুক্রবার দেশটির ইংরেজি দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, নিখোঁজ মন্ত্রীদের মধ্যে ২৫ জন ফেডারেল মন্ত্রী, প্রাদেশিক উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী এবং চারজন প্রাদেশিক মন্ত্রী, চারজন উপদেষ্টা ও ১৯ জন বিশেষ সহকারী রয়েছেন।
বিরোধী এমপিদের আবেদনের পর চলতি বছর ফের অনাস্থা ভোটের মুখে পড়তে হচ্ছে ইমরান খানকে। শুক্রবার জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের তারিখ ছিল। কিন্তু শুক্রবারের অধিবেশনে সম্প্রতি জাতীয় পরিষদের মারা যাওয়া সদস্য খায়াল জামান, সাবেক প্রেসিডেন্ট রফিক তারার ও উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্য রেহমান মালিকের বিদেহী আত্মার প্রার্থনা করা হয়।
এদিকে, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশটির বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের সময় পিছিয়ে গেছে। দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার আগামী ২৮ মার্চ বিকেল ৪টা পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেছেন। সেই সুযোগে ইমরান খান গদি বাঁচাতে দলীয় মিত্রদের সঙ্গে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন।
অন্যদিকে দেশটির রাজনৈতিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে শনিবার পাক প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কথা রয়েছে। এর আগে, শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কায়েদের (পিএমএল-কিউ) নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার ওই সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বসতে রাজি হয় উভয় দলের নেতারা।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যর্থতার অভিযোগে ২০২০ সাল থেকেই ইমরান খানের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তী নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো। পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধীদল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও মুসলিম লীগ (নওয়াজ) এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
গত ০৮ মার্চ রাজধানী ইসলামাবাদে এই দু’টি দলের নেতৃত্বে ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সেখানে বিরোধীরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে দাবি তোলেন—‘হয় পদত্যাগ করুন, নয়তো অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হোন’।
গত বছরের মার্চে বিরোধীদের দাবিতে প্রথমবারের মতো অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইমরান খান। তবে সেই সময় অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে বিপদ উৎরে যান ক্রিকেট তারকা থেকে প্রধানমন্ত্রীর মসনদে আসীন ইমরান। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে আয়োজিত সেই আস্থা ভোটে জয়ের জন্য ইমরানের ১৭২টি ভোটের প্রয়োজন হলেও তিনি পেয়েছিলেন ১৭৬ ভোট।
তবে, ফেডারেল স্তরে এখনো মন্ত্রীরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সমর্থন করছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি, তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী, জ্বালানিমন্ত্রী হাম্মাদ আজহার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারভেজ খট্টক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রাশেদরা এখনো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
পাকিস্তান সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বহু পিটিআই এমপি অনাস্থা প্রস্তাবে ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। উল্লেখ্য ৩৪২ আসনবিশিষ্ট পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ম্যাজিক নম্বর হলো ১৭২। পিটিআই-এর সদস্য সংখ্যা ১৫৫। বাকি মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ, বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি এবং গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সদস্যদের মিলিয়ে জোট সরকারের মোট সদস্য সংখ্যা ১৭৯।