Site icon টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ

শরণখোলায় বাদাম চাষে উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখছেন রফিকুল

মোঃ নাজমুল ইসলাম সবুজ, বাগেরহাট প্রতিনিধি।।

বাগেরহাট জেলার শরণখোলায় বাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা ৪০ শতক জমিতে তেমন কোন খরচ ছাড়াই দুই লক্ষাধিক টাকা বাদাম বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন চাষী রফিকুল তালুকদার 

গত বছরের অতিবর্ষনে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বীজতলা নষ্ট হয়েছিলো শরণখোলার অধিকাংশ চাষীর। তখন তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে বীজতলা সংগ্রহ করে পুনরায় তা রোপন করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করে। দূর দুরান্ত থেকে সংগ্রহ করা বীজ রোপন করে কেউ ভালো ফলন পায় , আবার কেউ ফসলে মার খেয়ে যায়।

পার্শ্ববর্তী আমড়াগাছিয়া হাট থেকে বীজ কিনে জমিতে রোপন করলেও সেবারে ভালো ফলন পায়নি শরণখোলা উপজেলার মঠেরপাড় গ্রামের চাষী রফিকুল তালুকদার। ক্ষতিগ্রস্থ রফিকুল তালুকদার ধানের ভালো ফলন না পেয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের শরনাপন্ন হয়ে তাদের পরামর্শ চায়। সেখানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম তার ক্ষেতে গিয়ে মাটি পরীক্ষা করে তাকে চীনা বাদাম চাষের পরামর্শ দেন। বাদাম চাষের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরনায় প্রায় ৪০ শতক (১২ কাঠা) জমিতে প্রথমবারের মত বাদাম চাষ শুরু করে সে।

শরণখোলা উপজেলার মঠেরপাড় গ্রামের চাষী রফিকুল ইসলাম জানায়, ধান চাষে মার খেয়ে বাদাম চাষের কথা শুনে প্রথমে ভয় পেয়ে ছিলাম। তার পরও কৃষি বিভাগের ভাইদের কথায় আমি ও আমার প্রতিবেশী মোশারেফ হাওলাদার বাদাম চাষ শুরু করলাম । কারন আমাদের এলাকায় এর আগে আর কেউ কোনদিন বাদাম চাষ করেনি ।

কৃষি বিভাগ থেকে তাকে বিনামূল্যে বাদামের বীজ ও সার সরবারহ দেয়া হয়েছে । নিজের ১২ কাঠা জমিতে নিজেই চাষ করে, নিজেই পরিচর্যা করতে তার তেমন কোন খরচ হয়নি ।

 এখন ঘন সবুজ বাদাম ক্ষেত দেখলেই সবার চোখ জুড়িয়ে যায়। তার জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মন বাদাম উৎপাদন হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চাষী রফিকুল তালুকদার। চার হাজার টাকা মন বিক্রি হলেও তার উৎপাদিত ৫০ মন বাদাম বিক্রি হবে দুই লক্ষাধিক টাকায়।

কম সময়ে, কম পরিশ্রমে এমন অকল্পনীয় লাভের স্বপ্নে তার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক।

শরণখোলায় এই প্রথম বানিজ্যিক ভাবে বাদাম চাষে বাম্পার ফলন ও চাষী রফিকুলের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাড়ানোর গল্প এলাকায় অন্য চাষীদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। অনেক চাষী তার বাদাম চাষে উৎসাহী হয়ে উঠেছে। আগামীতে তাকে অনুসরণ করে উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলায় ব্যাপক বাদাম চাষ হতে পারে।

কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে চাষী রফিকুল কৃষি অফিসে আসলে আমি তার ক্ষেত দেখতে যাই। 

এ সময় মাটি পরীক্ষা করে বেলে, দো- আঁশ মাটি চিহ্নিত করে তাকে বাদাম চাষের পরামর্শ দেই। প্রথম দিকে সে অনীহা প্রকাশ করে। তাকে বুঝিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে তার হাতে ২০ কেজি বাদামের বীজ ও সার তুলে দেই। এর ও কিছুদিন পরে সে ও তার প্রতিবেশী মোশারেফ হাওলাদার বাদামের চাষ শুরু করেন। তারা দু’জনেই বাদামের বাম্পার ফলন পাবেন। তবে তারা চাষে একটু বিলম্ব না করলে আরো ভালো ফলন পেতো বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, বাদাম চাষে তেমন সেচ ও পরিচর্যা লাগেনা। 

শরণখোলা উপজেলায় সেচ সংকট থাকায় এখানে বাদাম চাষ করা যেতে পারে। কম সময়ে, কম পরিশ্রমে বেলে দো-আঁশ মাটিতে বাদাম চাষে অধিক লাভ করা সম্ভব।

তিনি আরো জানান, চলতি বছরে এ উপজেলায় ৪ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ টি প্রদর্শনী ও ৩৫ জন কে বীজ সরবারহ করা হয়েছে। এবার প্রত্যেকেই বাদামের বাম্পার ফলন পাচ্ছেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন তিনি। বেলে, দো-আঁশ মাটি চিহ্নিত করে চাষীদের উৎসাহ দিতে পারলে এ উপজেলায় বাদাম চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে বলে তার অভিমত।

Exit mobile version