Site icon টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ

সাতক্ষীরায় মোবাইল চুরির সন্দেহে দুই কিশোরকে শারীরিক নির্যাতন

রফিকুল ইসলাম নিজস্ব প্রতিনিধি।।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শ্রীরামপুরে মোবাইল চুরি সন্দেহ দুই কিশোরকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত (১০সেপ্টেম্বর) শনিবার এমন অমানুষিক ঘটনা ঘটে।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত (৯সেপ্টেম্বর) শুক্রবার দুপুরের দিকে শ্রীরামপুর গ্রামের কামরুল বিশ্বাসের পুত্র আতাউরের একটি স্মার্ট ফোন হারিয়ে যায়। ফোনটি হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানান। আতাউর একই গ্রামের মৃত আ: করিমের পুত্র আযহারুল ইসলাম(১৩) ও সিরাজুল ইসলামের পুত্র রাসেল হোসেন (১৪) কে মোবাইল ফোনটি নিয়েছে সন্দেহ করে। সন্দেহের কারনে এদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত এই দুই কিশোরকে শ্রীরামপুর রোমনা ব্রিকস্ (ইটেরভাটা) নামক নির্জন স্থানে নিয়ে তাদেরকে স্বীকারক্তি করার জন্য শারীরিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তারা মোবাইলটি নিয়েছে বলে স্বীকার করে।

এ ব্যাপারে শ্রীরামপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নেছারুল আল মামুনকে ওইদিন রাতে ডাকলে অভিযুক্তরা মোবাইল নিয়েছে বলে তার সামনে স্বীকার করে। তখন ইউপি সদস্য রাসেলকে ১০হাজার টাকা ও আযহারুলকে ৭হাজার টাকা মৌখিক ভাবে জরিমানা করেন এবং তিন দিনের মধ্যে জরিমানা পরিশোধের কথা বলে তাদের অভিভাবকদের জানিয়ে ছেড়ে দেয়।

অন্যদিকে (১২সেপ্টেম্বর) সোমবার পার্শ্ববর্তী গ্রাম গয়েশপুর মৃত মুনছুর আলীর কন্যা সারজিনা খাতুন একটি মোবাইল পেয়েছে বলে শ্রীরামপুর এনামুল কম্পিউটার মালিককে জানাই। এক পর্যায়ে সেখানে গিয়ে জানা যায় পড়ে পাওয়া মোবাইল ফোনটি আতাউরের। মোবাইল ফোনটি বর্তমানে ইউপি সদস্য নেছারুল আল মামুনের কাছে সংরক্ষিত আছে।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী আযহারুল ও রাসেল জানান, আমরা দুইজন বাড়ির পাশে খেলা করছিলাম তখন আতাউরসহ কয়েকজন আমাদের দুইজনকে তুলে নিয়ে রোমানা ব্রিকস্ এর নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। আমরা কারন জানতে চাইলে আতাউর বলে আমার মোবাইল কোথায়। কিন্তু আমরা তো জানিনা এমন কথা বললে করিম বিশ্বাসের ছেলে শফিকুল ইসলাম, জোহর মন্ডলের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, তাবারক বিশ্বাসের ছেলে লাভলু বিশ্বাস, গফুর মোড়লের ছেলে বকুল হোসেন ও ওহিদ মোড়লের ছেলে আকাশ সহ আরো অনেকেই আমাদের এলোপাতাড়ী ভাবে মারধর শুরু করে। নির্যাতনের একপর্যায়ে আমরা ভয়ে মোবাইলটি নিয়েছি বলে স্বীকার করি। কিন্তু আমরাতো নেই নাই।

ফোন মালিক আতাউর জানান, আমার ফোনটি হারিয়ে গেলে আমি খোঁজাখুজি করতে থাকলে শ্রীরামপুরের আমজাদ বিশ্বাসের ছেলে দোকান ব্যবসায়ী আক্তার হোসেনের তথ্য মতে আযহারুল ও রাসেলকে সন্দেহ হলে আমি সহ কয়েকজন তাদের দুইজনকে ডেকে নিয়ে দুই একটা চড়থাপ্পড় দিই স্বীকার করার জন্য।

এবিষয়ে ইউপি সদস্য নেছারুল আল মামুন বলেন, ঘটনাটি রাতে আমাকে জানালে আমি আসি। তারপর কয়েকজন লোকজনসহ আযহারুল ও রাসেল মোবাইল নিয়েছে বলে স্বীকার করলে আমি তাদেরকে মৌখিক ভাবে জরিমানা করে তাদের অভিভাবকদের হাতে ছেড়ে দেই।

ভুক্তভোগীর পরিবাররা জানান, আমাদের ছেলেরা নিদোর্ষ। তাদেরকে বিনা অপরাধে মারধর করা হয়েছে। তাদেরকে আমরা প্রাথমিক ভাবে গ্রাম্য ডাক্তারের চিকিৎসা করে পরবর্তীতে তাদেরকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। মেডিকেল কলেজে ডাক্তাদের প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী বতর্মানে তারা বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছে। আমরা সুষ্ঠ বিচারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

Exit mobile version