এ বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী। ইরানে নারীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই ও সবার জন্য মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রচারের জন্য তাকে শান্তিতে নোবেল দেয়া হলো।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।
নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটেবলা হয়েছে, নার্গিস মোহাম্মদী একজন নারী, মানবাধিকারকর্মী ও স্বাধীনতা যোদ্ধা। তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য সাহসী লড়াইয়ের ফলে ব্যক্তিগত অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ইরানের শাসকরা তাকে ১৩ বার গ্রেফতার করেছে, পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত করেছে, সবমিলিয়ে ৩১ বছরের কারাদণ্ড ও ১৫৪টি বেত্রাঘাত করেছে। তিনি এখনও কারাবন্দি।
নার্গিস মোহাম্মদী ১৯৭২ সালের ২১ এপ্রিল ইরানের জাঞ্জানে জন্মগ্রহণ করেন। কোরভেহ, (কুর্দিস্তান), কারাজ ও ওশনাভিয়েহ শহরে তার শৈশব কাটে। তিনি ইমাম খোমেনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রি লাভ করার পর একজন পেশাদার প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি জীবনে পদার্পণ করেন। তিনি শিক্ষাজীবন থেকেই সংবাদপত্রে নারীর অধিকার নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন।
রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন ‘তাশাক্কুল দানেশজুয়ি রোশানগারান’ (আলোকিত ছাত্র সংগঠন)-এর সভা থেকে দুবার গ্রেফতার হন। সংগঠনের পাশাপাশি তিনি পর্বত আরোহণ সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে পরবর্তী সময়ে আর পাহাড় আরোহণে যোগদান করতে পারেননি।
তিনি বেশ কয়েকটি সংস্কারবাদী সংবাদপত্রের সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। দ্য রিফর্মস, দ্য স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড দ্য ট্যাকটিকস নামে রাজনৈতিক প্রবন্ধের বই প্রকাশ করেন। ২০০৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী শিরিন এবাদির নেতৃত্বে ডিফেন্ডারস অব হিউম্যান রাইটস সেন্টারে যোগ দেন। পরে তিনি এ সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।
নার্গিস ইরান সরকারের সমালোচনা করায় সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সালে গ্রেফতার হন। এক বছর পর মুক্তি দেয় তাকে। আবার ২০১০ সালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। কারাদণ্ড দেয়ার পর ২০১১ সালে আবার তাকে অন্য ‘জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে’ কাজ করার দায়ে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর ২০১২ সালে আদালত সাজা কমিয়ে ৬ বছর করেন। এরপর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের সহায়তায় তাকে মুক্তির আবেদন করা হলে ৩১ জুলাই ২০১২ নার্গিস মোহাম্মদী কারাগার থেকে মুক্তি পান।
২০১৫ সালের ৫ মে তাকে আবারও নতুন অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৯ সালে নার্গিস তেহরানের এভিন কারাগারে চিকিৎসাসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন। ২০২০ সালে কারাগারে কোভিডে আক্রান্ত হন। ৮ অক্টোবর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
২০২১ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করায় তাকে আবার আটক করা হয়। এখন পর্যন্ত তিনি ইরানের কারাগারে রয়েছেন।
১৯৯৯ সালে তিনি সহকর্মী সংস্কারপন্থি সাংবাদিক তাগি রহমানিকে বিয়ে করেন। বিয়ে করার কিছুদিন পরই রহমানিকে আটক করা হয়। মোট ১৩ বছর কারাদণ্ড ভোগ করার পর ২০১২ সালে রহমানি পরিবার ফ্রান্সে চলে আসেন। এদিকে নার্গিস তার মানবাধিকারের কাজ চালিয়ে যান। নার্গিস ও রহমানির যমজ সন্তান রয়েছে–আলী ও কিয়ানা।
এ পর্যন্ত যে পুরস্কার পেয়েছেন
২০০৯ সালে আলেকজান্ডার ল্যাঙ্গার পুরস্কার। মানবাধিকার কর্মী ‘আলেকজান্ডার ল্যাঙ্গারের’ নামে এ পুরস্কারের নামকরণ করা হয়। পুরস্কারটি ১০ হাজার ইউরোর সমমানের সম্মানী বহন করে।
২০১০ সালে নোবেল বিজয়ী শিরিন এবাদি যখন ফেলিক্স এরমাকোরা মানবাধিকার পুরস্কার জিতেছিলেন তখন তিনি এটি নার্গিসকে উৎসর্গ করেছিলেন। পুরস্কার উৎসর্গ করার সময় এবাদি বলেন ‘সাহসী নারী নার্গিস মোহাম্মদী এ পুরস্কার আমার চেয়ে বেশি প্রাপ্য’।
২০১১ সালে মানবাধিকার রক্ষায় সুইডিশ সরকারের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত হন। ২০১৬ সালে ওয়েইমার মানবাধিকার পুরস্কার পান। ২০১৮ সালে আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি থেকে ‘আন্দ্রেই সাখারভ’ পুরস্কার লাভ করেন।
২০২২ সালে বিবিসির ১০০ জন অনুপ্রেরণীয় প্রভাবশালী নারীর একজন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। ২০২৩ সালে মার্টা চুমালো ও এরেন কেসকিনের সঙ্গে যৌথভাবে সুইডিশ ওলোফ পালমে ফাউন্ডেশন থেকে ওলোফ পালমে পুরস্কার অর্জন করেন। ২০২৩ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম প্রাইজপ্রাপ্ত হন। সময় নিউজ