মোঃ নাজমুল ইসলাম সবুজ বাগেরহাট প্রতিনিধি।বাগেরহাটে কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে সাইকেল। চাকা থেকে শুরু করে এই সাইকেলের পুরো কাঠামোই কাঠের তৈরি। দেখে খেলনা মনে হলেও উন্নত বিশ্বে এই সাইকেলের চাহিদা অনেক বেশি। বাগেরহাটের বিসিক শিল্প নগরীতে তৈরি হলেও এই সাইকেলটি বাংলাদেশের কোন বাজারে বিক্রি হয় না। সাইকেল গুলো তৈরি হয় শুধুই ইউরোপের জন্য। এতে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।
বিসিক শিল্প নগরীতে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ। সংগৃহিত কাঠ প্রথমে সিদ্ধ করে আর্ন্তজাতিক মানের ট্রিটমেন্ট করা হয়। সেই কাঠ দিয়ে নিপুন হাতে বেবি ব্যালন্স বাইক নামে এই সাইকেলটি তৈরি করেন প্রায় একশ জন শ্রমিক। এদের কেউ চাকা তৈরিতে অভিজ্ঞ, কেউ তৈরি করেন সাইকেলের হ্যান্ডেল, ফ্রেম বা অন্যান্য অংশ। সবশেষে রং ও পলিশ মিশিয়ে তৈরি করা হয় একটি আকর্ষণীয় সাইকেল।এভাবে প্রতিদিন তৈরি করা হয় অন্তত অর্ধশত সাইকেল। যা চলে যায় গ্রীস ও বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
এই সাইকেল তৈরি ও রপ্তানির উদ্যোক্তা বাগেরহাট বেসিক শিল্প নগরীর ন্যাচারাল ফাইবার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শুধু এই বাইসাইকেল নয় কাঠ দিয়ে তারা তৈরি করছে সান বেড, হোটেল বেড ও কুকুর বিড়ালের খেলনা, হাতির ঘরের খুটিসহ পরিবেশবান্ধব আরো বেশ কিছু আকর্ষণীয় ফার্নিচার। যার ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে বিশ্বের বাজারে। সম্প্রতি বিদেশী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এই কারখানাটি পরিদর্শন করেন। এসব পণ্যের গুনগত মানে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
আমদানী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কোকো মার্টের প্রতিষ্ঠাতা পল ইফমোরফিডিস বলেন, এসব পন্যের বিশে^র বাজারে ভালই চাহিদা রয়েছে। তারা এই প্রতিষ্ঠান থেকে পন্য নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করেন। ক্রমেই তাদের আমদানীর পরিমান বাড়ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাইকেলের তৈরি নারী শ্রমিক তন্নি আক্তার জানান, তিনি এর আগে অন্য কাজ করতেন। বর্তমানে ন্যাচারাল ফাইবারে কাঠের সাইকেলে পলিশের কাজ করেন। তিনিসহ আরো ৩/৪জন এখানে পলিশের কাজ করে। এই সাইকেল বিদেশ যায়।শ্রমিক আমির হামজা বলেন, সারাদিন আনন্দের সাথে তিনি এখানে কাজ করেন। সর্বোপরি তার হাতে তৈরি সাইকেল বিদেশ যায় এটা ভাবতে ভালই লাগে।
সাইকেল তৈরির সুপারভাইজার আব্বাস আলী জানান, স্থানীয় ভাবে সংগৃহিত কাঠ আর্ন্তজাতিক মানের ট্রিটমেন্ট করে সাইকেলের ১১টি অংশ (পার্টস) তৈরি করা হয়। পরে এটি একেক জন একেক অংশ সেটিং করেন। পরে এটি পলিশ করা হয়। প্রত্যেক শ্রমিক আলদা আলাদ কাজ করে থাকেন।
ন্যাচারাল ফাইবারের ম্যানেজার আয়াস মাহমুদ রাসেল বলেন, গেল ছয় মাসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রায় ২০ হাজার সাইকেল রপ্তানি করা হয়েছে। সাইকেলের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে তাই তাদের অন্য ফ্যাক্টরীতেও এই সাইকেলের কারখানা সম্প্রসারিত করবেন। আর্ন্তজাতিক মান বজায় রেখেই সাইকেল তৈরি করা হয়।
ন্যাচারাল ফাইবারের প্রোপ্রাইটর মোস্তাফিজ আহম্মেদ বলেন, আগে তারা নারকেল পন্য নিয়ে কাজ করতেন। নানা কারনে নারকেল এখন আগের মত পাওয়া যায় না। তাই ব্যবসা পরিবর্তন করে এসব পন্য রপ্তানি করেন। বিশ্বের বাজারে তাদের তৈরি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও রপ্তানিতে নানান জটিলতা রয়েছে।
কাঠের তৈরি সাইকেলসহ এসব পন্য ব্যপক ভাবে রপ্তানি করা হলে একদিকে যেমন আসবে বৈদেশিক মুদ্রা অপরদিকে সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।