খুলনা প্রতিনিধি।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাসুদের পদত্যাগের দাবিতে দীর্ঘ ৫৮ ঘণ্টা ধরে চলা শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন অবশেষে সমাপ্ত হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জুস পান করিয়ে তাঁদের অনশন ভাঙান।
অনশন ভাঙানোর পূর্বে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা শিক্ষার্থীদের পড়ে শোনান। বার্তায় বলা হয়, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালুর লক্ষ্যে কুয়েটের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে তাঁদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে শীঘ্রই সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব প্রদান করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই বার্তা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার চত্বরে অপেক্ষারত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। এরপর তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে একটি আনন্দ মিছিল বের করেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তথ্য আদান-প্রদানের প্রধান মাধ্যম ‘কুয়েট ১৯’ নামের একটি ফেসবুক পেজে অনশন ভাঙার পরপরই একটি পোস্টে লেখা হয়, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমরা জিতেছি। আমার ভাইরা জিতেছে। মাসুদ পদত্যাগ করেছে!’ এই পোস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাঁদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলস্বরূপ উপাচার্যের পদত্যাগকে নিজেদের বিজয় হিসেবে উল্লাস প্রকাশ করেন।
এর আগে, বুধবার সকালে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার কুয়েট ক্যাম্পাসে এসে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবির কথা শোনেন এবং তাঁদের অনশন ভেঙে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। তবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের অবস্থানে অনড় ছিলেন এবং উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি থেকে সরে আসেননি।
শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পরপরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন, যা ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তোলে। একই দিনে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এক প্রেস ব্রিফিং করে। সেখানে শিক্ষকেরা স্পষ্ট ভাষায় জানান যে তাঁরা কোনো প্রকার চাপের মুখে উপাচার্যের অপসারণ মেনে নেবেন না।
এদিকে, চলমান সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক গঠিত তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার দুপুরে কুয়েট ক্যাম্পাসে পৌঁছান। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পক্ষ – আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক সমিতি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন।
অন্যদিকে, বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় মিলিত হয়। সভায় গত ১৪ এপ্রিলের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার বিকেল থেকে ছাত্রদের জন্য ছয়টি এবং ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক হল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে, আগামী ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্তটি বহাল রাখা হয়েছে বলে সিন্ডিকেট সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যাতে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এর জের ধরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে, ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য সব আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করে। দীর্ঘ আন্দোলনের পর উপাচার্যের অব্যাহতি এবং হল খুলে দেওয়ায় ক্যাম্পাসে স্বস্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।