Site icon টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ

সাংবাদিকের উসকানিতে রাজনীতিবিদের সুড়সুড়ি

মোঃ মাসুম বিল্লাহ।

আমাদের দেশের সাংবাদিকরা রাজনীতিকে উসকে দেয় আর রাজনীতিবিদদের সেই উসকানিতে সুড়সুড়ি দিতে ভালো লাগে। এখানে প্রথম পক্ষ ব্যবসায়ি। ফলে ব্যবসার প্রসারের জন্য দ্বিতীয় পক্ষকে বোকা বানায়। আর দ্বিতীয় পক্ষ নিজেকে দেশের হত্তাকত্তা ভেবে বোকামির পরিচয় দেয় অনর্থক গলাবাজি করে।শেখ হাসিনার পরাজয়ের পেছনে সাংবাদিকদের এমন প্রতারণামুলক প্রশংসা ও বিভ্রান্তিকরণ প্রশ্ন যেমন দায়ী তেমনি হাসিনার অদূরদর্শীতাও। কেননা তাকে যখন প্রশ্নের পরিবর্তে মনোরঞ্জনমূলক কথা বলে তখনি বোঝা উচিত ছিল তাদের প্রবঞ্চনা। কিন্তু কথায় বলে “হাটুর নিচে বুদ্ধি” তাই সে বুদ্ধি হাটু থেকে মস্তিষ্কে উঠতে পারেনি। সম্প্রতি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তাফা সরোয়ার ফারুকি, রুমিন ফারহানা ও সরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সাংবাদিকদের আজগুবি প্রশ্ন শুনে সে কথা প্রমাণ হয়।

এদেশের সাংবাদিকরা যতোটুকু না সাংবাদিক তার থেকে বেশি তারা সাংঘাতিক রকমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী। কেননা এক একটা মিডিয়া মালিক নিজের আর্থিক সুবিধার জন্য এসকল ব্যাবসায়ী মাধ্যম পরিচালনা করেন। আর সাংবাদিকরা সে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে নিজেরপরিবার পরিচালনা করেন এবং মালিক সে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল রাখার জন্য তাদেরকে নিয়োজিত করেছেন। এটা অনেকটা মার্কেটিং এর চাকরির মত। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বা বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা পণ্যের যে সকল রিপ্রেজেন্টেটিভ তারা যেভাবে অন্যের কাছে কর্মরত
কোম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রি করতে চাই ঠিক তেমনি ভাবে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এ দেশের সাংবাদিকরা তাদের চ্যানেলের টিআরপি বাড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখানে মালিকপক্ষ তার অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য কর্মীদেরকে নিয়োজিত করেন এবং এই কর্মীরা তারা চাকরির নামে মালিকের ইচ্ছাতে যথেচ্ছাচারে লিপ্ত হয়। তাদের কাছে সেটা চাকরি।

ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে এটা ভুলে যান যে একটা চ্যানেল বা একটা চ্যানেলের মালিকের মনোরঞ্জন করতে, টিআরপি বাড়াতে গিয়ে তিনি দেশের কতটুকু ক্ষতি করছেন। সংস্কৃতি উপদেষ্টা কে জুলাই অভ্যুত্থানের নিহতদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কে পাঁচ বছর থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং ডক্টর ইউনুসকে সশস্ত্র বাহিনীর মহড়া শেষে তার বক্তব্যকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে এদেশের সাংবাদিকরা কি প্রশ্ন করতে হয় তার ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ। হয় তারা বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করেন নতুবা তাদের শিক্ষা পূর্ণতা পায়নি।

এদেশের আর এক ব্যবসায়ীর নাম রাজনীতিবিদ। তাদের ব্যক্তিগত কোন পেশা নেই, তাই রাজনীতিটাকে জীবন ধারণের জন্য পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছে। একজন শ্রমিক যেমন কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক পান এদেশে রাজনীতিবিদরাও তেমন বেতনভুক্ত। কিন্তু তাদের পেশার উপর আস্থা কম তাই হেরে যাওয়ার ভয়ে নিয়োগকালীন সময়ে উপরি কামায়ের মাধ্যমে নিজের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। ফলে একবার নির্বাচিত হলে তাদের চৌদ্দ পুরুষের আর কাজ করে খাওয়া লাগে না। তাদের উত্তরসুরিদের জীবন যাপন চলাফেরা দেখে মনে হয় তার বাপ কোন কালে জমিদার ছিল। অথচ তার বাপ নির্বাচনের হলফনামায় মাত্র হয়তো আট বা দশ লাখ সম্পত্তির মালিক দেখান, কারো কারো তাও নেই। একজন মজুর ,রিক্সা চালকের বরং কাজ করে খাওয়ার সক্ষমতা আছে কিন্তু এদেশের রাজণতিবিদদের সেই কাজ করার যোগ্যতাটুকুও নেই। তাই তাদের পেশা রাজনীতি। কিন্তু রাজনীতিবিদের অভিনয়টাও তারা ঠিক মতো করতে পারছেন না। ফলে রাজনীতিবিদরা মিডিয়া কর্মীর শঠতার ফাঁদে পা দিচ্ছেন এবং নিজেদের অযোগ্যতার প্রমাণ করে চলেছেন। অনর্থক অপ্রাসঙ্গিক বকবক করে নিজেদের ভাবমূর্তিটাকে নষ্ট করেছেন শুধু নয় বরং দলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। রাজনীতিবিদরা কথা বলার সময় নিজেদের সীমাকে অতিক্রম করে এত বেশি বুদ্ধিহীনতার পরিচয় দিতে থাকেন যে কখন তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে স্ববিরোধী বক্তব্যের মাধ্যমে নিজের অযোগ্যতার প্রমাণ করেন তা বুঝতে পারেন না।।

ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সশস্ত্রবাহিনীকে দেওয়া উৎসাহমুলক বক্তব্য বুঝতে না পেরে বরং জল ঘোলা করে জনগণকে বিভ্রান্ত করেন। জুলাই সময়ে স্পষ্ট তো তারা বলেছিল যে এটা ছাত্রদের আন্দোলনে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা বিরোধী মত দিয়েছেন। কিন্তু নিজেদের সুবিধার জন্য আবার এ আন্দোলনের মহানায়ক হয়ে ওঠায় ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক দলের এরকম দ্বিচারিতা আমাদেরকে হতাশ করে। আমরা চাই আমাদের দেশে পরিশীলিত রাজনীতির জন্ম হোক। যেখানে রাজনীতিবিদরা মুখের কথা এবং মনের কথার মধ্যে মিল থাকবে। সুতরাং বাস্তবতা নিরিখে যে সকল রাজনীতিবিদরা আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন আমরা তেমনি রাজনীতিবিদ দেখতে চাই ।

Exit mobile version