বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক।
ভারতের আসাম রাজ্যে হাজার হাজার মুসলিম পরিবারকে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সীমান্ত এলাকায় ত্রিপল টাঙিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসনের বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার এই অভিযানকে কেন্দ্র করে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আসামে এই উচ্ছেদ অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৪০০ পরিবারের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বাংলাভাষী মুসলিম। সরকার দাবি করছে, এরা সরকারি জমিতে অবৈধভাবে বসবাস করছিল।
তবে অধিকারকর্মীরা বলছেন, এই মানুষদের অনেকেই বছরের পর বছর ধরে সেখানেই বসবাস করে আসছেন। বহু পরিবারকে ‘বিদেশি’ ও ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে উচ্ছেদ করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর রায় এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আসাম সরকার বলছে, রাজ্যের ট্রাইব্যুনালগুলো এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে বিদেশি হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে সমালোচকদের মতে, এসব সিদ্ধান্তে বহু ভুল আছে এবং এসব মানুষ আইনি লড়াই চালাতে সক্ষম নয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অমুসলিম অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্বের সুযোগ খুলে দেয়। সমালোচকদের দাবি, এই পদক্ষেপ মুসলিমদের প্রান্তিককরণের একটি কৌশল।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একাধিকবার বলেছেন, “বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের পরিচয়কে হুমকির মুখে ফেলছে।” সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে তিনি জনসংখ্যাগত পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রয়টার্স জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ করে বিজেপি-শাসিত এলাকায় বাংলাভাষী মুসলিমদের প্রতি মনোভাব আরও নেতিবাচক হয়েছে। এদের অনেককে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
ভারত সরকার সম্প্রতি ২,৩৬৯ জন অভিবাসীর একটি তালিকা তৈরি করেছে, যাদের বাংলাদেশে পাঠাতে চায়। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ভারতের বিরোধী দলগুলো বলছে, এই উচ্ছেদ ও বিতাড়ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নির্বাচনী কৌশলের অংশ। কংগ্রেস বলেছে, তারা ক্ষমতায় ফিরলে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর পুনর্বাসন নিশ্চিত করবে।
বিশ্লেষক প্রভীন দন্তি বলেন, “বিজেপি এখন আর কেবল জাতিগত জাতীয়তাবাদে সীমাবদ্ধ নেই, তারা ধর্মীয় জাতিতত্ত্বে রূপান্তরিত হচ্ছে, যার লক্ষ্য হয়ে উঠেছে বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়।