1. bdtelegraph24@gmail.com : Bdtelegraph Bangla :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. islam.azizul93@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
খাবারের রঙের নামে আমরা যেভাবে পোকা খাচ্ছি - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শাপলা কাপ অ্যাওয়ার্ড’ পেলো গৌরীপুরে ২৪ জন গৌরীপুর ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী সমিতির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  শ্যামনগর পৌরসভায় প্রায় ২ বছর পর জম্ম নিবন্ধন জটিলতার অবসান শরণখোলায় বিএনপি নেতার পক্ষে মহিলা দল ও  এতিম শিশুদের মধ্যে ঈদ বস্ত্র বিতরণ  অভয়নগরে ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে ইফতার  বিতরণ  শ্যামনগরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সেনাবাহিনীর হাতে আটক-৩ সুন্দরবনের গাছের ডাল থেকে এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করলো দুই জেলে অভয়নগরে সহপাঠির সাথে মারামারি,মাদ্রাসা ছাত্রের আত্মহত্যা মাগুরায় শিশু ধর্ষনে অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দিলো ক্ষুব্ধ জনতা কালীগঞ্জে পরিষদে ৩ যুবককে পেটানো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

খাবারের রঙের নামে আমরা যেভাবে পোকা খাচ্ছি

  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৪২৯ জন খবরটি পড়েছেন

ভুলক্রমে কোনো পোকা মুখের ভেতরে গেলে কী বীভৎস এক অভিজ্ঞতাই না হয়! অথচ আমরা দীর্ঘদিন ধরে এমন সব খাবার খাচ্ছি, এমন সব পণ্য ব্যবহার করছি, যেগুলো রাঙাতে সরাসরি পোকা ব্যবহার করা হয়।

জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিতঃ– রেস্তোরাঁয় বসেছেন খেতে। দু-তিন লোকমা ভাত মুখে দিয়ে আয়েশে চিবোচ্ছেন। শর্ষে ইলিশটা বেশ লাগছে। ভাতের সঙ্গে ঝোল মাখাতে মাখাতে হঠাৎ খেয়াল করলেন, সাদা ভাতের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে কুচকুচে কালো রঙের কিছু একটা। ভালো করে পরখ করতেই বুঝলেন, কালো বস্তুটি আর কিছু নয়, পোকা! ব্যস, খাবারটা গলায় আটকে গেল। দুই হাতে প্লেট সরিয়ে দৌড় দিলেন বেসিনের দিকে। কেউ কেউ তো বেসিনের দিকে দৌড়ানোর সময়টুকুও পান না! পেটের নাড়িভুঁড়িও উল্টে আসে কারও কারও।

মোটকথা, খাবারে পোকা মানেই চূড়ান্ত বিরক্তিকর এবং বীভৎস এক ব্যাপার। কিন্তু জেনে রাখুন, আমরা প্রতিনিয়ত এমন কিছু খাবার খাই কিংবা এমন কিছু পণ্য ব্যবহার করি, যেসব তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ওই পোকা!

রেড ভেলভেট কেকের কথাই ধরা যাক। নামটি শুনলেই অনেকের জিবে জল এসে যায়। এই কেকের লাল রং তৈরি হয় একধরনের পোকা বা কীট থেকে ! গা গুলিয়ে উঠল ? তাহলে শুনুন, মুখরোচক আরও অনেক ধরনের খাবার, যেমন চকলেট, আইসক্রিম, দই, জেলি, জুস, ডোনাট তৈরিতেও যে রং ব্যবহৃত হয়, তা আসে মূলত এক বিশেষ পোকা থেকে।

শুধু খাবার নয়, লিপস্টিক, আইশ্যাডো, শ্যাম্পু, লোশনের মতো প্রসাধনে ব্যবহৃত রংও আসে ওই পোকা থেকে ! কী সে পোকা? খাবার ও প্রসাধনসামগ্রীতে ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় লাল রঙের নাম কারমাইন। এটি মূলত কোচিনিয়েল বা কোচিনিল নামে একধরনের পোকাকে পিষে প্রস্তুত করা হয়। বিশ্বব্যাপী কারমাইনের অসম্ভব চাহিদার কারণে লাতিন আমেরিকায়, বিশেষত পেরুতে বিশাল অঞ্চলজুড়ে কোচিনিয়েলের চাষ করা হয়। বিশ্বে কারমাইনের মোট জোগানের ৯৫ শতাংশই আসে এই দেশ থেকে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যশিল্পে কারমাইনের অত্যধিক চাহিদা। দই, ফল থেকে তৈরি পিঠা, কোমল পানীয়, কেক, ডোনাটে এই রং ব্যবহার করা হয়। কারমাইনের জনপ্রিয়তার মূল কারণ হচ্ছে, এই রং সহজে নষ্ট হয় না। দীর্ঘদিনে, এমনকি কড়া রোদেও এটি খাবারের স্বাদে কোনো পরিবর্তন আনে না।

৫০০ বছরের বেশি আগে খাবারের এই রং ব্যবহারের শুরু। অনেকে মনে করেন, কৃত্রিম রঙের চেয়ে এটি অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু অনেকে মনে করেন, যেসব পণ্যে কারমাইন ব্যবহার করা হয়, সেসব পণ্যের গায়ে সেটি স্পষ্ট করে লেখা থাকা উচিত। বেশির ভাগ সময়ই পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি ‘কারমাইন’ না লিখে ‘প্রাকৃতিক লাল রং’, ‘ক্রিমসন লেক’, ‘ই১২০’, ‘প্রাকৃতিক রং’ ইত্যাদি লেখে।

আবার এখন বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস থেকেও এমন রং সংগ্রহ করা যায়, যা খাবারে ব্যবহারযোগ্য এবং যেগুলোর সঙ্গে কোনো পোকা বা কীটের সম্পর্ক নেই। যেমন বিটানিন নামে যে খাবারের রং ব্যবহৃত হয়, সেটি তৈরি হয় বিটের মূল থেকে।

‘আ পারফেক্ট রেড’ বইয়ের প্রচ্ছদ ‘আ পারফেক্ট রেড’ বইয়ের প্রচ্ছদকোলাজ: একটু থামুন কারমাইন ও এর ইতিহাস নিয়ে আ পারফেক্ট রেড নামের একটি বই লিখেছেন এমি বাটলার গ্রিনফিল্ড। এই মার্কিন লেখক মনে করেন, পণ্যে যদি কারমাইন ব্যবহার করা হয়, তাহলে তার প্যাকেটে সেটি স্পষ্ট করে বলা উচিত। তাঁর ভাষায়, ‘খাবারের রং হিসেবে কারমাইন দারুণ এক পণ্য এবং এটি গোলাপি, বেগুনি, কমলা, লাল ইত্যাদি রং তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কিছু মানুষের হয়তো এই রঙের প্রতি অ্যালার্জি আছে, কিন্তু আদতে এর কার্যকারিতা বেশ ভালো।’

কোচিনিয়েল পোকাটি লম্বায় ৫ মিলিমিটার থেকে শূন্য দশমিক ২ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। পুরুষ কোচিনিয়েলের পাখা আছে এবং উড়তে পারে। কিন্তু স্ত্রী কোচিনিয়েলের পাখা নেই, উড়তেও পারে না। কারমাইন তৈরির জন্য মূলত স্ত্রী কোচিনিয়েলই ব্যবহৃত হয়।

রং তৈরি হয় মূলত পোকায় থাকা কারমাইনিক অ্যাসিড থেকে। কোচিনিয়েলকে কয়েক ধাপে শুকিয়ে রং তৈরি করা হয়। এই ধাপগুলো চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছানোর আগে শুধু রংটুকু রেখে পোকার শরীরের পুরো অংশই বাদ দেওয়া হয়। কোচিনিয়েল কি নিরাপদ? উইকিমিডিয়া কমনস কোচিনিয়েল নিরাপদ নাকি অনিরাপদ, তা এককথায় বলা যায় না। তবে এটি স্বাস্থ্যকর বলা যেতে পারে। এই পোকা থেকে সংগৃহীত উপাদানে খুব অল্পসংখ্যক মানুষের অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। এ কারণেই মূলত কারমাইন ব্যবহৃত পণ্যের গায়ে স্পষ্ট করে তা উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। পরীক্ষাগারে কোচিনিয়েল ‘নন–টক্সিক’ বা ‘অবিষাক্ত’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

অধিকাংশ মানুষের জন্য এই পোকা কোনো সমস্যার কারণ নয়। খাবারে পোকা থাকবেই- পোকার কথা ভেবে প্রিয় খাবার না খাওয়া কি ঠিক হবে? পোকার কথা ভেবে প্রিয় খাবার না খাওয়া কি ঠিক হবে?

রোজকার জীবনে আমাদের খাবারে বহু পোকা বা কীট থাকে নানাভাবে। এফডিএ এটা জানে, কিন্তু তারপরও সেসব খাবার প্রস্তুত ও বাজারজাত করণে কোনো বাধা দেয় না। খাবারে পোকার ব্যবহার মানেই তা অনিরাপদ, ব্যাপারটা তেমন নয়। পোকা বা কীটের ব্যাপারটা জানলে অনেকের হয়তো অরুচি জন্মায়। তবে যেকোনো খাবার সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাজারজাত করার প্রক্রিয়ায় একাধিক ধাপে অনেক মানুষ কাজ করেন। তাঁরা সবাই যে সব সময় যথাযথ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কাজ করে করেন, সেটাও তো নয়। হয়তো এসব বিবেচনায় নিয়েই এফডিএ খাবারে নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত পোকা বা কীটপতঙ্গ ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।

শেষ কথা হলো, এর পর থেকে রেড ভেলভেট কেক খাওয়ার আগে হয়তো কোচিনিয়েল পোকাটির কথা আপনার মনে পড়বে, তবে একে খাবার হিসেবেই মেনে নিন। তালিকা থেকে প্রিয় খাবারের নাম বাদ দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না! সংগৃহীত

কাজী অরেছুল হক, দুবাই, প্রেরিত

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews