1. bdtelegraph24@gmail.com : Bdtelegraph Bangla :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. islam.azizul93@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
একজন হোসেনউদ্দীন হোসেন - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শাপলা কাপ অ্যাওয়ার্ড’ পেলো গৌরীপুরে ২৪ জন গৌরীপুর ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী সমিতির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  শ্যামনগর পৌরসভায় প্রায় ২ বছর পর জম্ম নিবন্ধন জটিলতার অবসান শরণখোলায় বিএনপি নেতার পক্ষে মহিলা দল ও  এতিম শিশুদের মধ্যে ঈদ বস্ত্র বিতরণ  অভয়নগরে ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে ইফতার  বিতরণ  শ্যামনগরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সেনাবাহিনীর হাতে আটক-৩ সুন্দরবনের গাছের ডাল থেকে এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করলো দুই জেলে অভয়নগরে সহপাঠির সাথে মারামারি,মাদ্রাসা ছাত্রের আত্মহত্যা মাগুরায় শিশু ধর্ষনে অভিযুক্তদের বাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দিলো ক্ষুব্ধ জনতা কালীগঞ্জে পরিষদে ৩ যুবককে পেটানো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

একজন হোসেনউদ্দীন হোসেন

  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ৭ মার্চ, ২০২২
  • ৫২৬ জন খবরটি পড়েছেন

শাহাদত হোসেন কাবিল।।

৭০ এর দশকের প্রথম দিকে সাংবাদিকতা শুরু করি। কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করে ঢুকলাম প্রথিতযশা সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী সম্পাদিত দৈনিক জনপদ পত্রিকায়। টো টো করে সারাদিন সংবাদের পিছে ঘুরে বেড়াই আর কেরোসিনের টিমটিমে ল্যাম্পের আলোয় অথবা হারিকেন জ্বালিয়ে রাত জেগে খবর লিখে পত্রিকায় পাঠাই।

কিন্তু পারিশ্রমিক তেমন একটা পাইনে। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক না পাওয়ার বেদনার কষ্ট সবার থাকে। আমিও সেই কষ্টটা অনুভব করতাম। এমনি এক কষ্ট নিয়ে আমার এক শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির কাছে গিয়ে বলেছিলাম, আমি আর সাংবাদিকতা করবো না। সব কথা শুনে তিনি আমাকে বলেছিলেন, সম্মানজনক পরিচিতি অর্থের চেয়ে বড়। আর একটা কথা হলো, যে গাছটায় ফল ধরে তার ডাল-পালা নিচু বা নোয়ানো থাকে। ধৈর্য ধরে সততার সাথে কাজ করো, সাফল্য তোমার হাতে ধরা দেবে। ওই সময় বয়সটা ২০-২২ বছর হলেও আমি তাঁর কথার মর্মার্থ উপলব্ধি করে সাংবাদিকতা পেশায় থেকে যাই এবং আজো আছি।

যাঁর কথা বললাম তিনি একদিকে যেমন লাঙলের ফলা দিয়ে মাটির বুকে আঁচড় কেটে ফসল ফলান অন্যদিকে কলম দিয়ে কাগজের বুকে ফুটিয়ে তোলেন অনন্য সাহিত্য। তিনি আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি প্রাণপুরুষ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাহিত্যিক ও গবেষষক হোনেনউদ্দীন হোসেন।

হোসেন উদ্দিন হোসেন -সংগৃহীত

প্রশ্ন জাগতে পারে সাহিত্য ক্ষেত্রে তিনি কি এমনটা করেছেন? কি করেছেন তা বলতে পারবো না। তবে এতটুকু বলতে পারবো, তিনি লিখছেন ছাত্রজীবন থেকে এবং এই ৮১ বছর বয়সেও সেই লেখালেখি অব্যাহত আছে। ১৯৭৪ সালে তার প্রথম বই যশোরাদ্যদেশ প্রকাশিত হয়। সেই থেকে একে একে বের হয় যশোর জেলার কিংবদন্তী’ (দুই খন্ড), অমৃত বৈদেশিক’, ভলতেয়ার ফ্লোবেয়ার তলস্তয় ত্রয়ী উপন্যাস ও যুগমানুষ’, ঐতিহ্য আধুনিকতা আহসান হাবীব, বাংলার বিদ্রোহ (দুই খন্ড), নষ্ট মানুষ’, সাধুহাটির লোকজন’, ইঁদুর ও মানুষেরা, মাইস অ্যান্ড মেন (ইঁদুর ও মানুষেরার ইংরেজি সংস্করণ) , সোনালী জলের কাঁকড়া, প্লাবন ও একজন ফ্লাড অ্যান্ড এ নুহ ( প্লাবন ও একজন এর ইংরেজি সংস্করণ), সমাজ সাহিত্য দর্শন, রণক্ষেত্রে সারাবেলা (মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ), লোকলোকোত্তর গাঁথা কিংবদন্ত, বিশ্ব মানব ভলতেয়া উত্তর পুরুষ, বনভুমি ও অন্যান্য গল্প, শেষ বিদায়ের আগে, হে আদি, হে বৃক্ষ, সাহিত্যের চিত্র বিচিত্র, মন মানুষের চালচিত্র ও কালান্তরের রূপকথা।
ভালো কিছু লিখছেন বলেই বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরুস্কারটি তিনি পেয়েছেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি-২০২২ তিনি গ্রহণ করেছেন পুরস্কারটি। তাঁর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে ৪ ভরি ওজনের গোল্ড মেডেল, ৩ লাখ টাকার চেক, সম্মাননা পদক এবং সনদপত্র।

শুধু বাংলা একাডেমি নয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশ থেকে পেয়েছেন পুরস্কার। ২০০৬ সালে ক্যাম্ব্রিজ (ইংল্যান্ড) থেকে তাঁকে টপ-হানড্রেট রাইটার্স হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং ক্যাম্ব্রিজ স্বর্ণপদক পান। কলকাতা বিধান নগর মেলা (সল্টলেক, কলকাতা) পদক, শিমুল পলাশ (ভারত) সম্মাননা পদক, লিটল ম্যাগাজিন সম্মাননা পদক (কলকাতা)পদক পান। কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে বাংলা বিভাগে হোসেনউদ্দীন হোসেনের ইঁদুর ও মানুষেরা উপন্যাসটি এম এ ক্লাসে পাঠ্যসূচি করা হয়।

পুরস্কার তিনি আরো পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে, চাঁদেরহাট পদক, ড.মুহম্মদ শহিদুল্লাহ পদক, বিজয় দিবস পদক, মাইকেল মধুসূদন একাডেমি পদক, কণ্ঠশীলন পদক, গুণীজন সম্মাননা পদক, এম এল হাই স্কুল সম্মাননা পদক, কপোতাক্ষ সাহিত্য পরিষদ পদক, আয়েশা-জব্বার সম্মাননা পদক, বিবর্তন আজীবন সম্মাননা পদক, বইমেলা (যশোর ইনস্টিটিউট) সম্মাননা পদক, মণিরামপুর বইমেলা সম্মাননা পদক, বগুড়া সাহিত্যচক্র পদক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগ আয়োজিত আন্তর্জাতিক লোক সম্মেলন (ঝিনাইদহ) পদক, বাংলা একাডেমি নিয়ন্ত্রিত সাহাদত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার, চিহ্নমেলা (রাজশাহী) সাহিত্য পদক, উমেশচন্দ্র পাঠাগার (খুলনা) পদক, বেনাপোল পৌরসভা সাহিত্য পদক, বিকল্প নির্মাণ সাহিত্য পদক, পূর্ব-পশ্চিম সাহিত্য সম্মাননা পদক ইত্যাদি।

হোসেনউদ্দীন হোসেন ১৯৪১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গাজী আজিজুর রহমান এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, লেখক মূলত একজন শ্রমশীল অগ্রসর চিন্তাশীল ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি সংশ্রয়ী গদ্যশিল্পী। তাঁর অমৃত বৈদেশিক প্রকাশ হলে তিনি একজন মননশীল বিশ্বসাহিত্য বিশ্লেষক প্রাবন্ধিক হিসেবে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। ফ্লাড অ্যান্ড এ নুহ প্রকাশিত হলে তিনি লাভ করেন দুর্লভ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তার ছোট গল্পসমূহ একটা ব্যতিক্রমী বিষয় হিসেবে পাঠককে সম্মোহিত করেছে। গল্পগুলো এতই জীবনঘনিষ্ঠ ও শিল্প সমৃদ্ধ যে একটি গল্পতো শর্ট ফিল্ম হবার মর্যাদা পেয়েছে।

মুক্তবুদ্ধির মানুষ হোসেনউদ্দীন হোসেনের প্রতিটি লেখা শ্রম ও ঘাম দিয়ে চিন্তাস্রোতে লেখা। তিনি সাহিত্য শিল্পকে পাবার জন্য বুকের রক্ত ঝরিয়ে সৃষ্টি করেছেন তার সাহিত্য কর্ম। এই সাধনা প্রকৃত শিল্পীর সাধনা।
হোসনউদ্দীন হোসেনও এই কথাটা ধারণ করেন। তিনি বলেন, সাহিত্য সাধনার ব্যাপার। সাহিত্য হচ্ছে রূপ দেয়া। সাহিত্য সৃষ্টির জন্য দরকার শিল্পবোধ। লেখককে বুঝতে হবে যেটা লেখা হচ্ছে সেটা সাহিত্যে রূপ পেয়েছে কি-না? সাহিত্যের রূপ যদি না পায়, তাহলে টিকবে না।

কলিম উদ্দিন-আছিরননেসার সন্তান হোসেনউদ্দীন হোসেন ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যে বাড়িতে বসবাস করেন সে বাড়িটির নাম দিয়েছেন সাহিত্য ভবন। ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ওই বাড়িতেই সহধর্মিণী হাসিনা আক্তারকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে আছেন। তাঁর ৪ সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত। আমরা বরেণ্য সাহিত্যিক ও গবেষক হোসেনউদ্দীন হোসেনের সুস্থতাসহ শতায়ু কামনা করি।

(৫মার্চ ২০২২ যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে দৈনিক কল্যাণ আয়োজিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাহিত্যিক ও গবেষক হোসেনউদ্দীন হোসেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পঠিত।) ফেসবুক থেকে নেয়া

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews