তারিম আহমেদ ইমন, অভয়নগর (যশোর) থেকে।
অভয়নগরের ভবদহের পানিবন্দি এলাকায় চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। যেন হাঁটা চলার উপায় নেই। এ অবস্থায় মানুষের বাইরে বের হওয়া খুবই দুস্কর। আয় রোজগারে ভাটা পড়েছে সবার। তবে সামনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সব চেয়ে বড় উৎসব দূর্গাপুজা কীভাবে হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তারপরও আশায় বুক বেঁধে থৈ থৈ পানির মধ্যেই পূজা মন্ডপ প্রতিষ্ঠা করে উৎসব পালনের চেষ্টায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সাম্প্রতিক দুই দফা টানা বৃষ্টিপাতে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ২৫গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে ভবদহ অঞ্চলে মানুষের এই উৎসবের আনন্দ অনেকটাই ম্লান । একটানা বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, ঘেরভেড়ী, ফসলি ক্ষেত, স্কুল-কলেজ- মাদ্রসা, মসজিদ ও মন্দির। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের দৈনন্দিন পুজা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বাড়ি ছেড়ে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে শতশত পরিবার।
বন্ধ হয়ে গেছে আয় রোজগারের পথ। মানুষের ঘরে ঘরে চলছে এখন কেবল হাহাকার আর চাঁপা কান্না। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দরজায় কড়া নাড়ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীও উৎসব দূর্গাপুজা। মহলয়ার মধ্য দিয়ে পুজার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং আগামী ১২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে শেষ হবে এ উৎসব। তবে এ উপলক্ষে উৎসবের কোন আমেজ নেই ভবদহ অঞ্চলের প্রেমবাগ, সুন্দলী, পায়রা ও চলিশিয়া ইউনিয়নের ভুক্তভোগী সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে। চারিদিকে কেবল অথৈ পানি ও জলাবদ্ধতার সীমাহীন দুর্ভোগে উৎসবের আনন্দকে ম্লান. করে দিয়েছে। দু’মুঠো ভাত জোগাড় যেখানে বড় কষ্টের; উৎসব সেখানে বিলাসীতা বলে জানিয়েছেন পানিবন্দি এলাকার মানুষ।
উপজেলা পরিষদের তথ্য মতে, অভয়নগরে অর্ধশতাধিক মন্দির পানিতে তলিয়ে গেছে। পুজা অর্চনার নূন্যতম অবস্থা নেই ৩৫টি মন্দিরে। তাছাড়া পানির কারণে সুন্দলী ইউনিয়নের ৪টি ও আন্ধা গ্রামের একটি মন্দিরে কোনো প্রকার পুজা হবে না। উপজেলায় এ বছর ১১৪টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা পূজা উদযাপন হবে।
উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের বাসিন্দা টুকু মজুমদার বলেন, গত এক মাস ধরে সংসারে আয় রোজগার বন্ধ। মাছ ধরে তা বিক্রি করে কোনো মতে জীবন বাঁচিয়ে রেখেছি। পুজো উৎসব আমাদের মত গরীব মানুষের জন্য না।
উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের বলারাবাদ গ্রামের বাসিন্দা উশা রাণী বলেন, আমাদের কোন পুজো নেই। পুজোর সময় ছেলে মেয়েদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে পারছি না। পানিও সরছে না। আমাদের কষ্ট দেখার আসলে কেউ নেই।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, প্রতিবছর সরকারি যে বাজেট থাকে দুর্গাপূজার জন্য তা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া যারা একান্ত অসহায় তারা যদি কোনো প্রকার সাহায্যের জন্য আবেদন করে তাহলে আমরা তাদেরকে সহায়তা করবো।