রংপুর, ১৪ জুন ২০২৫: রংপুরে যৌতুকের টাকার জন্য স্বামী কর্তৃক এক গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকালে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেজওয়ানা (২২) নামের ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামীর পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধেও মামলা গ্রহণে গড়িমসি ও অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নিহত রেজওয়ানার বাবা রেজাউল করিম অভিযোগ করেছেন, তিন বছর আগে রংপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরেয়ার তলের আব্দুল করিমের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই আব্দুল করিম যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। গত ৮ জুন বিকেলে একটি ট্রাক কেনার জন্য পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন আব্দুল করিম। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে রেজওয়ানার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন।
গুরুতর দগ্ধ রেজওয়ানাকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
রেজওয়ানার মৃত্যুর পর তাঁর মামা হেলাল মিয়া অভিযোগ করেন, শুক্রবার গভীর রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে রেজওয়ানার লাশ নিয়ে আসার সময় মাহীগঞ্জ থানা থেকে তাদের লাশ থানায় নিয়ে যেতে বলা হয়। লাশের সঙ্গে অভিযুক্ত স্বামী আব্দুল করিম, তাঁর বোন পারভীন ও ভগ্নিপতি ফখরুলও ছিলেন। স্বজনরা অভিযুক্ত পারভীন ও ফখরুলকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করলেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ করা হয়। পরে স্বজনরা তাদের আবার আটক করে পুলিশের কাছে দেন।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ প্রথম থেকেই মামলা নিতে গড়িমসি করছে। রেজওয়ানার চাচা মুকুল মিয়া জানান, তিনি মাহীগঞ্জ থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে ওসি ফোন করে বলেন যে তাঁর ভাতিজি আত্মহত্যা করেছেন এবং তারা মামলা নিতে পারবেন না, বরং আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।
তবে মাহীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, এজাহারে বাদীর ঠিকানায় ভুল থাকার কারণে মামলা নিতে দেরি হচ্ছে।
এদিকে, রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মারুফ আহমেদ শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং আটক তিনজনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। ওসির বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার দুপুর পর্যন্ত মামলা নথিভুক্ত না হওয়ায় নিহতের স্বজনরা লাশ দাফন না করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং তারা থানার সামনে অপেক্ষা করছেন। তাদের দাবি, মামলা নথিভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা লাশ দাফন করবেন না।