বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ব্যবস্থার চাহিদাও ক্রমাগত বাড়ছে। এই চাহিদা পূরণে সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে বেশ কিছু ৫ তারকা হোটেল গড়ে উঠেছে, যা দেশি-বিদেশি পর্যটক এবং কর্পোরেট অতিথিদের বিশ্বমানের সেবা প্রদান করছে। বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থা, উন্নত মানের খাবার, বিনোদনের সুযোগ এবং আধুনিক কনফারেন্স সুবিধা নিয়ে এই হোটেলগুলো বাংলাদেশের আতিথেয়তা শিল্পের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত কঠোর মানদণ্ড পূরণ করেই একটি হোটেল ৫ তারকা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই মানদণ্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্ষের মান, সেবার গুণগত মান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, খাবারের বৈচিত্র্য, বিনোদন সুবিধা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক পরিষেবা।
অনেক সময় দেশের বিভিন্ন হোটেল ৫ তারকার মানদন্ড পূর্ন না করেও নিজেদের হোটেলকে ৫ স্টার বলে পর্যটকদের সাথে প্রতারনা করে থাকেন। তাই কোন কোন হোটেল সরকার অনুমোদিত ও ৫ তারকা হোটেলের আন্তর্জাতিক মানদন্ড মেনে চলে তা জেনে রাখা ভাল।
১. সোনারগাঁও হোটেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকা)
২. ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা
৩. রেডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেল (রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন)
৪. ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড (দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা)
৫. হোটেল সারিনা লিমিটেড
৬. ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট
৭. লা মেরিডিয়ান ঢাকা
৮. রেনেসাঁ হোটেলস (রেনেসাঁ ঢাকা গুলশান হোটেল)
৯. সিগ্যাল হোটেল লিমিটেড
১০. ওশান প্যারাডাইস লিমিটেড
১১. সায়মন বিচ রিসোর্ট লিমিটেড
১২. রেডিসন ব্লু বে ভিউ (রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ)
১৩. রয়্যাল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা
১৪. গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ
১৫. মম ইন লিমিটেড
১৬. হোটেল জাবীর প্যারাডাইস লিমিটেড
১৭. দি প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট
অবস্থান: ১০৭ নং কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, ঢাকা।
বৈশিষ্ট্য: শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই হোটেলটি তার বিশাল লবি, সবুজ বাগান, সুইমিং পুল, বিভিন্ন ধরণের রেস্টুরেন্ট এবং মিটিং ও ইভেন্টের সুবিধার জন্য পরিচিত।
অবস্থান: ১ নং মিন্টু রোড, ঢাকা-১০০।
বৈশিষ্ট্য: এটি ঢাকার অন্যতম পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী ৫ তারকা হোটেল। আধুনিক নকশা, আন্তর্জাতিক মানের রেস্টুরেন্ট, সুইমিং পুল, ফিটনেস সেন্টার এবং মিটিং রুমের সুবিধা রয়েছে।
অবস্থান: এয়ারপোর্ট রোড, জোয়ারসাহারা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা।
বৈশিষ্ট্য: বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি শান্ত ও সবুজ পরিবেশে অবস্থিত এই হোটেলটি এর সুপ্রশস্ত বাগান, সুইমিং পুল, স্পা এবং অত্যাধুনিক কনফারেন্স সুবিধার জন্য পরিচিত।
অবস্থান: প্লট নং ০১, সি ডব্লিউ এন, বি, রাস্তা-৪৫, গুলশান-২, ঢাকা।
বৈশিষ্ট্য: গুলশানের বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত এই হোটেলটি আধুনিক স্থাপত্য, বিলাসবহুল কক্ষ, রুফটপ সুইমিং পুল, স্পা এবং একাধিক আন্তর্জাতিক রেস্টুরেন্টের জন্য জনপ্রিয়।
অবস্থান: হাউজ নং ২৭, রোড নং ১৭, বনানী বা/এ, ঢাকা-১২১৩।
বৈশিষ্ট্য: বনানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই হোটেলটি তার বিলাসবহুল পরিবেশ, বিভিন্ন ধরণের খাবার এবং ব্যক্তিগত সেবার জন্য পরিচিত।
অবস্থান: এয়ারপোর্ট রোড, নিকুঞ্জ-২, ঢাকা-১২২৯।
বৈশিষ্ট্য: শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি অবস্থিত এটি একটি জনপ্রিয় ৫ তারকা হোটেল, যেখানে রুফটপ পুল, স্পা, ফিটনেস সেন্টার এবং বিভিন্ন ডাইনিং অপশন রয়েছে।
অবস্থান: ৭৯/এ বাণিজ্যিক এলাকা, এয়ারপোর্ট রোড, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯।
বৈশিষ্ট্য: শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছে অবস্থিত এই হোটেলটি এর আধুনিক ডিজাইন, রুফটপ ইনফিনিটি পুল, স্পা এবং কর্পোরেট ইভেন্টের সুবিধার জন্য পরিচিত।
অবস্থান: প্লট নং-৩, ব্লক সিইএস-এফ, ৭৮ নং গুলশান এভিনিউ, ঢাকা।
বৈশিষ্ট্য: গুলশান এভিনিউতে অবস্থিত মারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডের এই হোটেলটি আধুনিক ইন্টেরিয়র, রুফটপ পুল, সুসজ্জিত কক্ষ এবং বিভিন্ন রন্ধনশৈলীর রেস্টুরেন্ট এর অন্যতম আকর্ষণ।
অবস্থান: হোটেল-মোটেল জোন, কক্সবাজার বিচ, কক্সবাজার।
বৈশিষ্ট্য: সমুদ্র সৈকতের খুব কাছে অবস্থিত এটি কক্সবাজারের অন্যতম পরিচিত একটি ৫ তারকা মানের হোটেল। এর বিস্তীর্ণ সবুজ প্রাঙ্গণ এবং সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগের সুযোগ রয়েছে।
অবস্থান: প্লট নং ২৮ ও ২৯, কলাতলী রোড, কক্সবাজার।
বৈশিষ্ট্য: কক্সবাজারের কলাতলী রোডে অবস্থিত এই হোটেলটি এর বিশাল সুইমিং পুল, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি অবস্থানের জন্য জনপ্রিয়।
অবস্থান: মেরিন ড্রাইভ রোড, কলাতলী, কক্সবাজার।
বৈশিষ্ট্য: মেরিন ড্রাইভের পাশে অবস্থিত এই রিসোর্টটি তার চমৎকার সমুদ্রের দৃশ্য, ইনফিনিটি পুল এবং বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থার জন্য পরিচিত।
অবস্থান: জালিয়া পালং, ইনানী, উখিয়া, কক্সবাজার।
বৈশিষ্ট্য: কক্সবাজার শহরের বাইরে ইনানীতে অবস্থিত এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম ৫ তারকা রিসোর্টগুলির মধ্যে একটি। বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই রিসোর্টে একাধিক সুইমিং পুল, খেলার মাঠ, স্পা এবং সমুদ্র সৈকতে সরাসরি প্রবেশের সুবিধা রয়েছে।
অবস্থান: এস এস খালেদ রোড, লালখান বাজার, চট্টগ্রাম।
বৈশিষ্ট্য: চট্টগ্রামের কেন্দ্রে অবস্থিত এই হোটেলটি অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা, রুফটপ ইনফিনিটি পুল, স্পা, ফিটনেস সেন্টার এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের রেস্টুরেন্টের জন্য সুপরিচিত। এটি কর্পোরেট এবং ব্যক্তিগত উভয় ধরণের অতিথিদের জন্য উপযুক্ত।
অবস্থান: রাধানগর, বালিশীর, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার (সিলেট বিভাগ)।
বৈশিষ্ট্য: বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ৫ তারকা রিসোর্ট, যা চা বাগানের মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। এটি বিলাসবহুল কক্ষ, সুইমিং পুল, গলফ কোর্স, স্পা এবং বিভিন্ন বিনোদন সুবিধার জন্য সুপরিচিত।
অবস্থান: পুটিজুরী, বাহুবল, হবিগঞ্জ (সিলেট বিভাগ)।
বৈশিষ্ট্য: পাহাড় ও সবুজের মাঝে অবস্থিত এই বিলাসবহুল রিসোর্টটি এর বিশাল প্রাঙ্গণ, একাধিক সুইমিং পুল, গলফ কোর্স, থিম পার্ক এবং প্রকৃতির সাথে মিশে থাকা অনন্য অভিজ্ঞতার জন্য পরিচিত।
অবস্থান: নওদাপাড়া রংপুর রোড, বগুড়া।
বৈশিষ্ট্য: বগুড়ায় অবস্থিত এই ৫ তারকা হোটেলটি আধুনিক সুবিধা, সুসজ্জিত কক্ষ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মানের খাবারের জন্য পরিচিত। উত্তরবঙ্গের পর্যটন ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে এর গুরুত্ব রয়েছে।
অবস্থান: ১২৫৬, এম এম আলী রোড, যশোর-৭৪০০।
বৈশিষ্ট্য: যশোরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই আধুনিক ৫ তারকা হোটেলটি ব্যবসা ও অবসর ভ্রমণকারীদের জন্য উপযুক্ত। এটি উন্নত মানের কক্ষ, রেস্টুরেন্ট এবং মিটিং সুবিধা প্রদান করে।
বাংলাদেশের ৫ তারকা হোটেলগুলো দেশের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করছে এবং আন্তর্জাতিক মানের আতিথেয়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ব্যবসা, অবসর বা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের জন্য, এই হোটেলগুলো বিলাসবহুল অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বমানের পরিষেবা নিশ্চিত করে। প্রতিটি হোটেলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা রয়েছে, যা অতিথিদের চাহিদা অনুযায়ী বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (Bangladesh Parjatan Corporation) এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত কঠোর মানদণ্ড অনুযায়ী হোটেলগুলোকে ৫ তারকা হিসেবে অনুমোদন দেয়।
বিলাসবহুল কক্ষের আকার ও সুবিধা, আন্তর্জাতিক মানের রেস্টুরেন্ট, ২৪ ঘণ্টা রুম সার্ভিস, সুইমিং পুল, স্পা, ফিটনেস সেন্টার, কনফারেন্স ও ব্যাঙ্কোয়েট সুবিধা, উচ্চমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, দক্ষ জনবল এবং পরিবেশবান্ধব অনুশীলন ইত্যাদি মানদণ্ড পূরণ করতে হয়।
খরচ হোটেলের ধরন, কক্ষের ধরণ, মৌসুম এবং বুকিংয়ের সময়ের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। তবে সাধারণত প্রতি রাতে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।
বাংলাদেশের ৫ তারকা হোটেলগুলো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুসরণ করে এবং অতিথিদের নিরাপত্তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাই বিদেশী পর্যটকদের জন্য এগুলো সাধারণত অত্যন্ত নিরাপদ।
পরিবার নিয়ে থাকার জন্য প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, র্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ (শ্রীমঙ্গল), রয়্যাল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা (কক্সবাজার) এবং দি প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট (হবিগঞ্জ) জনপ্রিয়। এসব হোটেলে পরিবার উপযোগী কক্ষ, একাধিক সুইমিং পুল এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক সুবিধা রয়েছে।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকা, দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, লে মেরিডিয়ান ঢাকা, এবং র্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ কর্পোরেট মিটিং, সম্মেলন এবং অন্যান্য ইভেন্টের জন্য আধুনিক সুবিধা এবং বিশাল ভেন্যু প্রদান করে।
হ্যাঁ, ঢাকা ছাড়াও কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), হবিগঞ্জ, বগুড়া এবং যশোরে অনুমোদিত ৫ তারকা হোটেল বা রিসোর্ট রয়েছে।