যশোরের বাঘারপাড়ায় রিক্তা খানম (৬) নামে এক শিশুকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার ঠাকুরকাঠি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনার অভিযোগ পেয়ে দুপুরেই ধর্ষনকারী নাজমুল হক ওরফে বান্দার আলী কে(৩৫) আটক করেছে পুলিশ। খাটের তলা থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ জনতা।
ধর্ষনকারী উপজেলার দোহাকুলা ইউনিয়নের ঠাকুরকাঠি গ্রামের নওশের আলীর ছেলে। ধর্ষনের শিকার নিহত রিক্তা খানম একই গ্রামের মুক্তার হোসেনের মেয়ে। শিশুটি স্থানীয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মক্তব ভিত্তিক শিশু শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
পারিবারিক সুত্রে জানাযায়, নিহত রিক্তারা দুই বোন ও এক ভাই। ভাই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। শনিবার সকালে মায়ের সাথে ভাত খেয়ে খেলতে বের হয়, অনেক সময় মা বাবার সামনে না আসায় রিক্তাকে খোঁজা-খুঁজি শুরু হয়। অনেক সময় ধরে খুজে না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যসরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজা-খুঁজি শুরু করেন।
খোঁজার এক পর্যায়ে বেলা ২টার দিকে বাবা মুক্তার হোসেন খুনি নাজমুলের বাড়ির বারান্দায় রিক্তার জুতা দেখতে পায়। তখন তাঁর বাবা নাজমুলের ঘরে উঁকি দিলে খাটের নিচে রিক্তার বস্তাবন্দী লাশ দেখতে পায়। এসময় গোপনে থানায় সংবাদ দিলে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যেয়ে লাশ উদ্ধার ও হত্যাকারীকে আটক করেন।
রিক্তার বাবা মুক্তার হোসেন বলেন, ‘খুজদি খুঁজদি নাজমুলের বাড়ি আইসে বারান্দায় রিক্তার জুতো দেখে ঘরের মধ্যি তাগায় দেহি বস্তার মধ্যি আমার মনির একখান হাত বারোই রইছে। পরে ঘরের মধ্যি ঢুহে দেহি আমার রিক্তারে মাইরে বস্তায় ভইরে রাহেছে।
ততক্ষনে এলাকায় সাড়া পড়ে গেলে এলাকার মানুষ চারিদিক থেকে মুক্তার হোসেনের বাড়িতে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামি এলাকা বাসির হাতে আটক হয় এবং সেখান থেকে পালিয়ে যায়। কান্না কন্ঠে রিক্তার মা সাহিদা খাতুন বলেন, ‘ আমার একটাই দাবী, খুনি নাজমুলকে ফাঁসি দেয়া হোক।’
দাদী নবীরণ নেছা বলেন, ‘ সকালে ভাত খাইছে কোনে যে হারাই গেলো খুঁইজে পায় নে। পরে চেঁচামেচি শুনে আইসে দেহি রিক্তারে বস্তায় ভরা।’প্রতিবেশী সবুর হোসেন বলেন, ‘বাচ্চাটারে মেরে লাশ পুঁতে রাখার জন্য বাড়ির পাশে গর্ত করে। এতটুকু বাচ্চার সাথে এমন জঘন্য কাজ কেউ করতে পারে শুনে গা শিউরে উঠছে।’
এলাকাবাসী জানায়, সকালে রিক্তা হারালে পরিবারের লোকসহ গ্রামবাসীরা সবাই খোঁজাখুঁজি করেন। নাজমুলের ঘর থেকে লাশ পেলে নাজমুল পালানোর চেষ্টা করে। এসময় স্থানীয়রা তাকে আটক করে। পরবর্তীতে ছুটে পালানোর চেষ্টা করলে এলাকাবাসীর সহায়তায় বাঘারপাড়া থানার ওসি ফিরোজ উদ্দীন নিজেই তাকে আটক করেন।
শিশু রিক্তা খাতুনকে নির্মমভাবে হত্যা করায় এলাকাজুড়ে শোকের মাতম। এসময় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্যা ও দোহাকুলা ইউপি চেয়ারম্যান মোতালেব তরফদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। শিশু রিক্তার হত্যাকারীর সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানান এলাকাবাসী । অনেকের ধারনা সকালের যেকোন সময় শিশুটিকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে।
প্রতিবেশি আক্তার আলী জানান, নিহত শিশুর পিতা ও প্রতিবেশি নাজমুল পারিবারিক ভাবে একই স্থানে বসবাস করে আসছে। শনিবার সকাল থেকে মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা। অনেক খোজাখুজির পর সন্দেহ হলে নাজমুলকে তার বাড়ির পাশে গর্ত খুড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তার চেহারায় অপরাধের চিহ্ন ভেসে ওঠে। সাথে সাথে সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে নাজমুল।
বাঘারপাড়া থানার ওসি ফিরোজ উদ্দীন জানান, খবর পেয়েই সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে শিশুটিকে ধর্ষনের পর গলায় মোবাইলের চার্জারের তার পেঁচিয়ে ও বালিশ চাঁপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। লাশ গুমের জন্য আসামী তার নিজ ঘরের খাটের নিচেই লুকিয়ে রাখে। মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।