তেহরান/জেরুজালেম, ১৪ জুন ২০২৫: মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক সংঘাত নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছেছে। ইসরায়েল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনকেন্দ্র ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে ইরানের সেনাপ্রধানসহ অন্তত ২০ জন সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। জবাবে শুক্রবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট নিক্ষেপ করেছে ইরান, যাতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই অভিযানের নাম দিয়েছেন ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ এবং বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন ঠেকাতে এই হামলা চালানো হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করেছেন, যতদিন ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা একটি হুমকি থাকবে, ততদিন এই অভিযান চলবে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফিন দেফরিন জানিয়েছেন, প্রায় ২০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আটটি শহরের শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে, যার মধ্যে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট এবং ইসপাহানের পারমাণবিক স্থাপনাও রয়েছে। তারা দাবি করেছে, ইরানের কয়েক ডজন রাডার ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে।

ইরানের সংবাদমাধ্যম নুরনিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় তেহরানের আবাসিক এলাকায় ৭৮ জন নিহত ও ৩২৯ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছয়জন পরমাণুবিজ্ঞানী এবং বেশ কয়েকটি শিশু রয়েছে। নিহতদের মধ্যে ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কোরের প্রধান হোসেইন সালামি, সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল বাঘেরি এবং বিমানবাহিনীর কমান্ডার আমির আলী হাজিজাদেহ রয়েছেন।

ইসরায়েলি হামলার পরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। খামেনি বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করেছে এবং এর জন্য কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জাতিসংঘের কাছে লেখা এক চিঠিতে এই হামলাকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং দ্রুত নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, ইসরায়েল যুদ্ধের আশঙ্কায় ১০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করে সব সীমান্তজুড়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসরায়েলের সেনাপ্রধান আইয়াল জামির হুঁশিয়ার করেছেন, যারা তাদের চ্যালেঞ্জ করবে, তাদের বড় মূল্য দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকেই জানতো, তবে তাদের কোনো সামরিক ভূমিকা ছিল না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে বড় সংঘর্ষের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং ইরানের প্রতি একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়া, চীন, জর্ডান, ওমান, কাতার ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ১৯৯০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর এই প্রথম ইরানের ভূখণ্ডে এত বড় পরিসরে সামরিক হামলা চালানো হলো, যা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে।