যশোর প্রতিনিধি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা কমিটির আহ্বায়ক রাশেদ খান হঠাৎ পদত্যাগ করেছেন। সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি সংগঠনের সবধরনের সম্পৃক্ততা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলার আহ্বায়ক পদ থেকে আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিচ্ছি। একইসঙ্গে এনসিপি, যুবশক্তি বা ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সারাদেশে মোমবাতি প্রজ্বালনের সময়ে এমন ঘোষণায় তার সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয়ে পড়লে অনেকে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দেন।
রাশেদ খান পরে মন্তব্যে স্পষ্ট করেন, সংগঠনের জন্য তিনি সর্বোচ্চ শ্রম, মেধা ও সময় দিয়েছেন, কিন্তু ব্যক্তি জীবনে অর্থসংকটে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় যেসব আর্থিক গুজব ছড়ানো হয়েছে, সেগুলোকে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমি এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি— চাইলে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করা হোক।”
তিনি দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনার অভাব, কেন্দ্রীয় নেতাদের অন্য রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে সম্পৃক্ততা এবং নবগঠিত কমিটির বিতর্কিত নির্বাচন প্রক্রিয়ার কারণে সংগঠন সারা দেশেই নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, গত বছরের ২৬ নভেম্বর রাশেদ খানকে আহ্বায়ক এবং জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তিকে সদস্যসচিব করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট যশোর জেলা কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। তবে ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম বিল্লাহ নৈতিক স্খলনের অভিযোগে পদত্যাগ করেন এবং পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে আরও সাত নেতা একইভাবে সরে দাঁড়ান।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সদস্যসচিব প্রাপ্তির পদও কেন্দ্রীয় কমিটি স্থগিত করে, উপজেলা কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে। এসব ঘটনাপ্রবাহ সংগঠনের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনকে স্পষ্ট করে তোলে।
রাশেদ খান ছিলেন কোটাবিরোধী আন্দোলন ও জুলাই অভ্যুত্থানের একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক। বাম ঘরানার ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা এই নেতা যশোরে আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন। তার পদত্যাগে জেলা রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে অনেকে তার পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, কেউ আবার সমালোচনাও করেছেন। কেউ লিখেছেন, “রাশেদ বড় কষ্টে তৈরি হয়, সময় তাকে এভাবেই হারায়।” আবার কেউ লিখেছেন, “জীবনে এই প্রথম ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
রাশেদ খান শেষ পর্যন্ত লিখেছেন, “জুলাই বিক্রি করিনি আমি। আমার শ্রেণির লড়াই, ন্যায্যতার লড়াই জারি থাকবে।