নিজস্ব প্রতিনিধি।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান মেগা প্রকল্পের বাঁধ নির্মান কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। ভাঙন কবলিত এলাকা হতে প্রতিদিনই অবৈধভাবে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করায় তারা এমন দাবি জানিয়েছে। অবৈধ বালুখেকোদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং ভাঙনমুখ থেকে বালু উত্তোলনে স্থানীয় নৌ থানার পুলিশ সহায়তা করছে বলেও অভিযোগ।
সোমবার (১১ আগস্ট) বেলা ১২টায় শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানান ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা রুস্তম আলী মাহফিজুর রহমান বাবু, প্রমথ মহালদার, সুজন মন্ডল প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালী, আটুলিয়া ও কাশিমাড়ী এলাকা তীব্র ভাঙন কবলিত এলাকা। যে কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব এলাকার কোন চরকে বালুমহাল হিসেবে ঘোষনা করা হয়নি। বরং সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ সচল রাখতে পার্শ্ববর্তী আশাশুনি উপজেলার হিজলিয়া চরের পাঁচ একর জায়গাকে বালুমহাল ঘোষনা করা হয়েছে । সংশ্লিষ্ট বালুমহল ইজারা পেয়েছেন আ’লীগ দলীয় সাবেক এমপি জগলুল হায়দারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রহমান বাবু ও শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনোয়ারুল ইসলাম আঙুর।
সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন নির্দিষ্ট বালু মহাল অনেক দূরে হওয়ার কারণে বালুখেকো বাবু ও আঙুর শ্যামনগরের দুগার্বাটি, জেলখালী, ঝাপা, বিড়ালাক্ষ্মী, জেলিয়াখালীসহ ভাঙন কবলিত বিভিন্ন অংশ হতে বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয়রা বাধা দিলেও তারা মানছে না, উপরোন্ত চাঁদাবাজির মামলায় জড়ানোর ভয় দেখাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও অভিযোগ করেন, রাতের আধাঁরে ৩০/৩২টি বোট ও কার্গো দিয়ে বালু লুট করা হচ্ছে। এসময় বুড়িগোয়ালীনি নৌ-থানার ওসিকে জানানো হলে তিনি কোন ধরনের পদক্ষেপ নেন না। বরং নানা টালবাহানা করে তিনি বালুখোরদের বালু উত্তোলনে সহায়তা করছেন। উপকুলবাসীর সুরক্ষার জন্য টেকসই বাঁধ নির্মিত হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। কিন্তু নির্মানাধীন সেই বাঁধের পাশের নদী থেকে যদি আবারও ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করা হয় তবে অচিরেই এসব এলাকার বাঁধ আবারও ভাঙনের মুখে পড়বে। সেজন্য অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে বাঁধের কাজ স্থগিত রাখার দাবি জানান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম আঙুর জানান আমার লোকদের নিষেধ করা হলেও তারা মাঝেমধ্যে এমন ভুল করছে। নির্দিষ্ট চর কিছুটা দূরে হওয়ায় অনেক সময় কিছু বোর্ট মালিক এমন দুষ্টামি করে। তাদেরকে নিষেধ করা হবে।
বুড়িগোয়ালীনি নৌ থানার ওসি আসাদুাজ্জামান জানান আমরা প্রতিনিয়ত অনেক অভিযোগ পাই। কিন্তু উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া আমারা মুভ করতে পারি না। আবার কোন কোন সময় অভিযান পরিচালনার খবরে আগেই তারা পালিয়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রিন্স রেজা জানান ভাঙনকুল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে অবশ্যই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়ে বাঁধের সুরক্ষার জন্য আইনী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সুপারিশ করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন জানান ইতিমধ্যে তিনি নিজে একটি অভিযান পরিচালনা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের পাশ থেকে পুনরায় বালু সংগ্রহের কোন সুযোগ নেই। যারা এমন কাজ করবে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।