মাদারীপুর প্রতিনিধি ।।
মাদারীপুর রাজৈরের টেকেরহাট সেফ ডেলিভারী হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় হসপিটাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে রোগীর আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে ভূক্তভোগির পরিবার ও এলাকাবাসি হসপিটালটি ঘেরাও করে চিৎকার চেচাঁমেচি করে।
পরে খবর পেয়ে রাতেই রাজৈর থানার ওসি শেখ সাদিক ও রাজৈর-শিবচরের সার্কেল এসপি মো.আনিসুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে বিচারের আশ্বাস দিলে ভূক্তভোগিরা চলে যায়।
ভূক্তভোগি প্রসূতি জেসমিন বেগমের স্বামী মো. রাকিব জানান, আমার স্ত্রী জেসমিন বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে রবিবার রাত ৯টার দিকে রাজৈরের টেকেরহাট সেফ ডেলিভারী হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসি। ৮ হাজার ৪০০ টাকার চুক্তিতে ভর্তি করেন।
হসপিটালের মালিক হাফিজা আক্তার রত্না। পরে রবিবার রাত ১২টার দিকে হসপিটালের মালিক হাফিজা আক্তার রত্না তার স্বামী মো. আবুল হোসেন মিলে আমার স্ত্রী জেসমিন বেগমের নরমাল ডেলিভারী সম্পন্ন করেন। এ সময় আমার বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু হসপিটাল কর্তৃপক্ষ কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয় না। পরের দিন সোমবার দুপুর ১২টার দিকে আমাদের হসপিটাল থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরে আমার বাচ্চা ওইদিন রাত ১০টার দিকে মারা যায়। ওই হসপিটালে কোন ডাক্তার ছিলো না। আমার বাচ্চার মৃত্যুর বিচার চাই। আমার বাচ্চার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে আমার আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী হসপিটাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। এসময় পুলিশ এসে আমাদের বিচারের আশ্বাস দিলে আমরা চলে আসি।
এ ব্যাপারে হসপিটালের মালিক কথিত ডাক্তার হাফিজা আক্তার রত্না জানান,সদ্যভুমিষ্ট শিশুটি সুস্থ অবস্থায় বাড়ি নিয়ে গেছে। হয়ত ঠিকমত ঔষুধখাওয়াতে ভুল করেছে। তাই শিশুটির মৃত্য হয়ে থাকতে পারে। তবে এ বিষয় নিয়ে মিমাংসার জন্য কথাবার্তা চলছে।
রাজৈরের হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন হাওলাদার জানান, ঘটনা জেনেছি। ডাক্তার ছাড়া প্রসুতির ডেলিভারী করানো কাম্য নয়, অনাকাংখিত।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মনির আহমেদ খান জানান, সংশিষ্ট বিষয়ে অপ্রশিক্ষিত বা সনদবিহিন ব্যক্তি এ কাজ করে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সনদবিহিন ব্যক্তিদের এ কাজে সম্পৃক্ত হবার কোন সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, রাজৈর উপজেলায় প্রায় ২৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল রয়েছে। ২/৩টি ছাড়া এ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলিতে কাগজে কলমে নিয়োগ দেয়া থাকলেও সার্বক্ষণিক এমবিএস ডাক্তার বা ডিএমএফ অথবা এলএমপি পল্লী চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত নার্স থাকে না।
রাজৈরের টেকেরহাট সেফ ডেলিভারী হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরও একই অবস্থা। কোন চিকিৎসক নেই। ঐ হসপিটালের মালিক হাফিজা আক্তার রত্না ও তার স্বামী মো. আবুল হোসেন মিলেই ডেলিভারীর কাজ করেন।