ডেস্ক রিপোর্ট।।
ঈদ উল আযহাকে কেন্দ্র করে কোরবানীর পশুর হাট-ফুটপাত দখল এবং দুর্ঘটনামুক্ত পথের জন্য করণীয় শীর্ষক প্রতিবেদন পাঠ ও সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, কোরবানীর অবৈধ পশুর হাট বাড়াবে ভোগান্তি, থাকবে চরম যানজট। উত্তরণে প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের যথাযথ পদক্ষেপ এবং আইনের প্রয়োগ।
১ জুলাই বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানার লিখিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে উদ্বোধন করা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে নির্মম পথ দুর্ঘটনায় আমাদের ৩ জন নাগরিকের এ মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, বাইকারদের বেপরোয়া গতির কারণে কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুতে বাইক নিষিদ্ধ করেছে সাময়িক সময়ের জন্য, কিন্তু তারা পদক্ষেপ নিতে পারতো কঠোর শাস্তি ও জরিমানার; তা না করে এমন পদক্ষেপে বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে ৩৭ লক্ষ ৫২ হাজার নিবন্ধিত মোটর সাইকেল-এর মালিক; যারা ভ্যাট-ট্যাক্সসহ বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্বকে সমৃদ্ধ করছে।
সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনামের সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদীর সঞ্চালনায় এতে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। বক্তব্য রাখেন সেভ দ্য রোড অস্ট্রিয়ার আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, শওকত হোসেন, আইয়ুব রানা, জিয়াউর রহমান জিয়া, সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, ওয়াজেদ রানা, আল আমিন মুন্না, আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল, জাহিদ রিয়াদ, কায়েস সজিব প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনামুক্ত ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে তুলে ধরা হয় ১০ টি সুপারিশ-
১. যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং বন্ধে পুলিশ-প্রশাসন-সংশ্লিষ্টদের কার্যত পদক্ষেপ গ্রহণ; প্রয়োজনে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে জরিমানা, শাস্তি প্রদান করা
২. বাস বে ও ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করার জন্য সচেতনতা এবং বাধ্য করতে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা
৩. ফুটপাত দখলের কারণে মহাসড়কে দু-তিন কিলোমিটার যানজট দীর্ঘ হচ্ছে যেহেতু, সেহেতু আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং স্থানিয় নেতাদের হাত থেকে ফুটপাত মুক্ত করতে বিভাগ-জেলা-উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ নোটিশ জারি করা।
৪. ২০৫ কিলোমিটারের ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটার অপ্রশস্ত সড়ককে ঈদের আগে যথাসম্ভব যানজট মুক্ত রাখার পাশাপাশি ঈদের পরপরই রাস্তা প্রশস্থকরণে বিশেষ উদ্যেগ গ্রহণ।
৫. পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ফরিদপুরের ভাঙ্গা মোড় পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রাস্তায় দক্ষিণাঞ্চলমুখী ২১ জেলার সব যানবাহনে নির্মম পথ দুর্ঘটনা বা যানজট যেন না থাকে, সে জন্য কোরবানীর পশু বহনকারী ট্রাক-পিকআপগুলোর পাশাপাশি সকল বাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে কার্যত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৬. সড়ক-মহাসড়কে যেহেতু সর্বোচ্চ ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কে চলতে হয়; সেহেতু দুর্ঘটনা ও যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে; ঈদযাত্রার ভোগান্তি কমাতে ওভারটেকিং বন্ধ এবং সকল রকম পরিবহনকে স্বাভাবিক গতিতে বাহন চালাতে বাধ্য করা।
৭. সড়ক-মহাসড়কের আশেপাশে কোরবানীর পশু বিক্রি, জবাইসহ সকল প্রক্রিয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
৮. ২ হাজার ৫২১ টি বেহাল সড়ককে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে সংস্কার করতে উদ্যেগ নিতে হবে।
৯. স্থানিয় ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের চাঁদাবাজীর সূত্রতায় গড়ে ওঠা সড়ক-মহাসড়কের অবৈধ পশুর হাট উচ্ছেদে প্রশাসনের কার্যত ভূমিকা রাখতে হবে।
১০. ঈদকে কেন্দ্র করে পরিবহন থামিয়ে রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ব্যক্তিদের চাঁদাবাজী বন্ধ না হলে এবার ঈদযাত্রায় ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে না সাধারণ মানুষ।
সংবাদ সম্মেলনে পথ দুর্ঘটনায় আহত মো. হান্নান এবং সুলতানা রাত্রী তাদের দুঃসহ পথ দুর্ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দূর্ঘটনার একটি পরিসংখ্যান দেয়া হয়- দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল চালানোর পাশাপাশি নিয়ম না মানা এবং হেলমেট ব্যবহারে অনীহার কারণে ৮৫৮ টি দুর্ঘটনায় আহত ৭৫২ এবং নিহত হয়েছে ২৭৬ জন; অসাবধানতা ও ঘুমন্ত চোখে-ক্লান্তিসহ দ্রুত চালানোর কারণে ৬১৮ টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪৫৬ এবং নিহত হয়েছে ১৫৬ জন; খানা খন্দক, অচল রাস্তা-ঘাট আর সড়কপথ নৈরাজ্যের কারণে ৯৩৮ টি বাস দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৭৫১ জন এবং নিহত হয়েছে ৪২০ জন; পাড়া-মহল্লা-মহাসড়কে অসাবধানতার সাথে চলাচলের কারণে লড়ি-পিকআপ-নসিমন-করিমন-ব্যাটারি চালিত রিক্সা-সাইকেল ও সিএনজি দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৯৬ টি আহত হয়েছে ৬৬৩ জন এবং ১৯৫ জন নিহত হয়েছে। এছাড়াও ১ থেকে ৩১ জুন পর্যন্ত নৌপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১২২ টি। আহত ৪৭৭ জন, নিহত হয়েছে ২৪ জন; রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯৭ টি। আহত হয়েছে ১৭২ জন, নিহত হয়েছে ১৭ জন। আকাশপথে কোন দুর্ঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে ৩৭ জনকে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি