বিলাল মাহিনী
একদিন সূর্যডুবি হবে…সমুদ্রের ওপারে
তোমার সঙ্গে হবে না আর দেখা, হবে না কথা
দিন, মাস, বছর পেরোবে,
তোমার সঙ্গে কথা হবে না।
কথা না হতে না হতে ভুলতে থাকবে
আমার সঙ্গে কাটানো দুষ্টু-মিষ্টি প্রহরগুলো
ভুলে যাবে- কীভাবে ‘হ্যালো সোনা পাখি’ বলে ফোনটা রিসিভ করতে
আমার ‘জানপাখি’ ডাকটা কেমন শুনাতো; তাও
তুমি ভুলে যাবে রাত করে বাসায় ফেরার কাহিনী
ভালোবাসার ফুল-পাপড়ি,
বাইকের পেছনে বসে দেখা-
সান্ধ্য একাদশী চাঁদ,
ভুলে যাবে- আমার অপলক চেয়ে থাকা নয়নের হাসি
পদযুগলে চুমু খাওয়া পাগলাটে চঞ্চুর স্বাদ।
তারপর, এই ধরো,
আমার ষাট, তোমার বিয়াল্লিশ
হঠাৎ খুব করে ইচ্ছে হলো ভৈরবের তীরে বসে
এককাপ উত্তপ্ত কফি খেতে,
পাশের বেঞ্চিতে তুমি, তোমার পরিবার!
গভীর রাত তখন,
তুমি ঝুম জ্যোৎস্নায় নীল জল তরঙ্গে শাড়ির আঁচল ভেজাচ্ছ
ঠিক তখন, নিঃসঙ্গতার সাথে বহু বছরের গোপন চুক্তি চলছে আমার!
কোনো একদিন ফাতেহা শরীফে, বৈশাখী বা রথের মেলাতে-
তোমায় দেখে- অদ্ভুত জিজ্ঞাসারা চোরা স্রোতে
ভেসে যেতে যেতে প্রশ্ন করবে-
‘এই অবেলায় তুমি কোথা হতে এলে?’
তুমি বলবে-
‘আমি তো এই; এখানেই ছিলাম,
দূর থেকে তোমায় দেখছিলাম, কিন্তু…
জানো তুমি, এতো দিনেও কেনো মেঘের কোলে রোদ হাসেনি?
বাওড়ের কালো জলে কেনো পদ্ম ভাসেনি;
তমনিশিতে আলো ঢেলে হৃদয়ের উঠোনে ফুল ফোটেনি?
কেনো জানো?
তবে শোনো, যবে থেকে তুমি নিঃসঙ্গ করে চলে গেছো,
সেদিন থেকে আমি জীবন্ত বেওয়ারিশ লাশ!
না, সেটা কেউ দেখেনি কখনো, কেউ খোঁজেনি?
যদিও মৃদু হাসি ওষ্ঠে জড়িয়ে রাখতাম,
তোমায় পরশ আর স্মৃতিগুলো হাতড়িয়ে…।
তবে সেদিন থেকে আমার বুকের শ্মশানে এমন পোড়া গন্ধ ছিলো-
যা কেউ কখনো শুকেনি!
তুমি হয়তো বলবে- ‘মন পোড়া গন্ধ কি পরখ করা যায়?
মন পুড়েছিলো সেই কবে! তোমার মনে আছে?
যেদিন আমি তোমার বুকের কাছটায় গিয়ে কপলের ক্ষুদ্র টিপসম তিলটা ছুঁয়ে বলেছিলাম-
‘ছেড়ে যাবে না তো?’
তুমি বলেছিলে- ‘যাহ্ পাগল! ছেড়ে যাওয়ার জন্য কি আর ভালোবেসেছি?
বুকের ভিতর হৃদপিন্ডটাই তো খুঁজে পাই না, তোমার বুকে পাই।
শত কোটি চুমুতে চুষে নিতাম তোমার লবনাক্ত যত বিষাদ;
তারপর হাতটি টেনে আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল গেঁথে বলতাম-
প্রতিক্ষার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পুঁছতে হবে অনাবিল সুখের মানজিলে,
তুমি অভয় দিতে, বলতে- ‘খুব ভালোবাসি তোমায়!
বলতে, আমাদের প্রেম নব ইতিহাসের সূচনা করবে!
পৃথিবী ওলট-পালট হয়ে যাবে, শুধু রয়ে যাবে আমাদের অবিনাশী প্রেম!