প্রতিনিধি, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)। রাবার, প্লাস্টিক পোড়ানো হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সীমানা পাশেই, ফলে এর বিষাক্ত গন্ধ ও ধোয়ায় অতিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা। বিদ্যালয়ের ১০ থেকে ২০ মিটার দূরেই জ্বলছে বিষাক্ত আগুন।
শ্যামনগর পৌরসভার ১৫ নং সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষে বিনা বাধায় এলজিইডির সড়ক নির্মাণে নির্মাণ সমগ্রী প্রস্তুত করতে পোড়ানো হচ্ছে প্লাস্টিকের জুতা-রাবার যার বিষাক্ত গন্ধ ও ধোয়ায় অতিষ্ঠ হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। সরকারি নীতিমালার কোনো বিধিনিষেধ তোয়াক্কা না করে প্রায় ২-৩ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে এই অপকর্ম।
বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে শ্যামনগর পৌরসভার সোয়ালিয়া এলাকায় গিয়ে এই ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। ১৫ নং সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির চারপাশে হাজার হাজার মানুষের আবাসস্থল। অথচ এমন একটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পোড়ানো হচ্ছে প্লাস্টিকের জুতা-রাবার। ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট এবং সর্বোপরি প্রভাব পড়ছে আশপাশের কৃষি জমির ওপর।
এলাকাবাসী বলেন, স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন শ্যামনগর উপজেলার এলজিইডির বিভিন্ন রাস্তা সংস্কারের পিচ গলানোর জ্বালানি হিসেবে তুষ ও কাঠের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরাতন জুতা, পলিথিন ও প্লাস্টিকসহ নানা রকমের ভাঙারি দ্রব্য। প্রভাবশালী ঠিকাদাররা পরিবেশ-গাছপালা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির তোয়াক্কা না করে এসব পোড়াচ্ছে। নষ্ট বিষাক্ত বর্জ্য পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়া ও বর্জ্য পোড়ার গন্ধে এলাকার পরিবেশ ও জনজীবন বিষিয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন আশপাশের ফসল ও গাছপালার ক্ষতিসহ নানা সমস্যার।
১৫ নং সোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার খাতুন বলেন, বিদ্যালয়টির সন্নিকটে রাস্তা সংস্কারের পিচ গলানোর জ্বালানি হিসেবে প্লাস্টিকের জুতা-রাবার জ্বালিয়ে পরিবেশ দূষণের সাথে সাথে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন,প্লাস্টিকের জুতা-রাবার পোড়ানো বিষাক্ত কালো ধোয়া বিদ্যালয়কে আচ্ছন্ন করে রাখে। যা বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকীর মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষক ও শিশুদের বেশিরভাগ শ্বাস কষ্ট ও চোখের রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কোমলমতি শিশুরা ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। তাদের চোখ জ্বালা সহ শ্বাস কষ্টের মতো মারাত্বক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে। শিশুদের অভিভাবকগণ তাদের শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাচ্ছেন না। এছাড়াও বিদ্যালয়ের লোহার আসবাব পত্র, গ্রীল সহ অন্যান্য অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্লাস্টিকের জুতা-রাবার পোড়ানো বিষাক্ত কালো ধোয়ায়। প্লাস্টিকের জুতা-রাবার পিচ জ্বালানো বিষাক্ত কালো ধোয়া থেকে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের রক্ষায় বিদ্যালয়ের সন্নিকটে পিচ জ্বালানো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে দাবী জানিয়েছেন তিনি।
এবিষয়ে স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশনের মালিক নুরুল হক মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখানে আমার কাজ হচ্ছে না জাকাউল্লাহ্ সাহেবের কাজ।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকাউল্লা অ্যান্ড ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান মো. জাকাউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এবিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডাক্তার সঞ্জীব দাস বলেন, এঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে দায়িত্ব দিয়েছে এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলেছি।