বাগেরহাট প্রতিনিধি। বাগেরহাটের প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হজরত খান জাহান আলীর (র.) মাজার। মাজার সংলগ্ন বড় দিঘিটির প্রধান আকর্ষণ ছিল ‘কালা পাহাড়’ ও ‘ধলা পাহাড়’ নামের কুমির যুগল। কয়েক বছর ধরে কুমির দুটি মারা যাওয়ায় মাজারের ঐতিহ্য হুমকির মুখে পড়েছিল। এবার মাজারের শেষ কুমিরটিও মারা যাওয়ায় ঐতিহ্যটি পুরোপুরি বিলুপ্তির পথে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, একসময় এই কুমির দুটি মাজারের ভক্তদের বিশ্বাস ও অনুভূতির প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। বহু বছর ধরে তারা এখানে বংশ বিস্তার করে আসছিল। তবে ২০১৫ সালে ‘ধলা পাহাড়’ নামের কুমিরটির মৃত্যুর পর মাজারের ঐতিহ্য হারাতে থাকে। এরপর মাজারের শেষ কুমিরটিও ১৯ অক্টোবর ২০২৩ মারা যায়।
ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মিত্রের লেখা ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, খান জাহান আলী তার দিঘিতে ‘কালা পাহাড়’ (পুরুষ) ও ‘ধলা পাহাড়’ (নারী) নামে দুটি কুমির ছেড়ে লালন-পালন করতেন। খান জাহান আলীর মৃত্যুর পরও মাজারের খাদেম ও ভক্তরা এই কুমির দুটিকে খাবার দিতেন। ধীরে ধীরে এই কুমির দুটি মাজার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।
তবে, ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ থেকে আনা ৬টি কুমির এই দিঘিতে অবমুক্ত করা হলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। এরপর একে একে কুমিরগুলো মারা যেতে থাকে। সবশেষ খবর অনুযায়ী, মাজারের দিঘিতে এখন আর কোনো কুমির অবশিষ্ট নেই।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঐতিহ্যবাহী এই দিঘির কুমির সংরক্ষণ ও বংশবিস্তারের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে, ছয়শো বছরের ঐতিহ্য খুব শীঘ্রই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এদিকে, মৃত কুমিরগুলোর চামড়া প্রক্রিয়াকরণের পর ষাটগম্বুজ মসজিদ সংলগ্ন যাদুঘরে দর্শনার্থীদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।