নওয়াপাড়া পৌর (যশোর) প্রতিনিধি । বাড়ির উঠানে বাবার মরদেহ রেখে সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সালিসে ব্যস্ত ৯ সন্তাান। সালিশী বৈঠক শেষে ১৬ ঘণ্টা পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, ইউপি মেম্বার ও এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে মরদেহের দাফন সম্পন্ন করা হয়। বুধবার ভোর ৬টার দিকে মৃত্যু হলেও ওই দিন রাত ১০টা পর্যন্ত বাড়ির উঠানে পড়ে ছিল বৃদ্ধ বাবার মরদেহ সন্তানদের এমন কীর্তি দেখে হতবাক হয়েছেন গ্রামবাসী।
ঘটনাটি ঘটেছে অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকায়। মৃত ব্যক্তির নাম হাবিবুর রহমান বিশ্বাস (৭২)। তিনি একজন কৃষক ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, মৃত হাবিবুর রহমান বিশ্বাসের চার স্ত্রী ও ৯ সন্তান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছোট স্ত্রী ও তার ছোট ছেলে সোহেল বিশ্বাসের সঙ্গে কোটা গ্রামে বসবাস করতেন। মৃত্যুর পূর্বে ছোট স্ত্রীর নামে ৮৩ শতাংশ জমি লিখে দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে কয়েকবার সালিসের আয়োজন করেছিলেন অন্য স্ত্রী ও সন্তানেরা। কিন্তু সিদ্ধান্তের বিষয়ে অটল ছিলেন তিনি। বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হাবিবুরের মৃত্যুর খবর শুনে সকালে বাড়িতে আসেন ছেলে আতাউর রহমান, সুমন, আনোয়ার ও হাফিজুর রহমান। জমিজমার বিরোধ না মিটানো পর্যন্ত বাবার মরদেহ দাফন করতে বাধা সৃষ্টি করেন তারা।
পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, ইউপি মেম্বার ও এলাকাবাসীকে ডেকে বাড়ির উঠানের এক পাশে সালিশী বৈঠক বসানো হয়। এসময় উঠানে খাটিয়ার ওপর বৃদ্ধের মরদেহ পড়ে ছিল।
মৃতের ছোট ছেলে সোহেল বিশ্বাস বলেন,‘বাবার কবর পর্যন্ত খুঁড়তে দেয়নি তারা। আমার মায়ের নামে লিখে দেওয়া ৮৩ শতাংশ জমির মধ্য থেকে ৫০ শতাংশ সৎ ভাইয়েদের নামে লিখে দেওয়ার শর্তে মুচলেকা দেওয়ার পর কবর খুঁড়তে ও দাফন করতে দেয় তারা। মৃত্যুর ১৬ ঘণ্টা পর বাবার মরদেহ দাফন সম্পন্ন করতে হয়েছে। আল্লাহ ওদের বিচার করবেন।’
সালিশী বৈঠকে উপস্থিত ইউপি মেম্বার কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। রাত ১০ টার পর মরদেহের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।’
চলিশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সানা আবদুল মান্নান জানান,‘মরদেহ ফেলে রাখার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি জানার পর আমার প্রতিনিধি, স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও এলাকাবাসী সালিসের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক সমস্যার সমাধান করেছেন।’