ঢাকা, ২৫ মে: চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা ছাড়াই সরকারি কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতির বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে সরকার। রোববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশ জারি করেন। অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর থেকেই সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ করছেন। এই অধ্যাদেশ জারির পর তাদের আন্দোলন আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নতুন অধ্যাদেশে ‘সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান’ শিরোনামে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী যদি অনানুগত্য সৃষ্টি, শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করা, কর্তব্য সম্পাদনে বাধা দেওয়া, ছুটি ছাড়া কর্মে অনুপস্থিত থাকা, অন্যকে অনুপস্থিত থাকতে উসকানি দেওয়া বা কর্তব্য পালনে বাধাগ্রস্ত করার মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন, তাহলে তাকে ‘অসদাচরণের দায়ে’ দণ্ডিত করা হবে। দণ্ডের মধ্যে রয়েছে নিম্নপদে অবনমিতকরণ, অপসারণ অথবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করা।
অধ্যাদেশে অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াও স্পষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উল্লিখিত অপরাধের জন্য অভিযোগ গঠিত হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অভিযুক্তকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবেন। অভিযুক্তের ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণের সুযোগ থাকবে। কারণ দর্শানোর পর বা শুনানির শেষে যদি অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে দণ্ড আরোপ করা হবে। এমনকি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত কারণ না দর্শালেও দণ্ড কার্যকর হতে পারে। নোটিশ জারির ক্ষেত্রে অভিযুক্তের কাছে সরাসরি, বাসস্থানের দৃষ্টিগোচর স্থানে, দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করে অথবা ই-মেইলে পাঠানোর বিধান রাখা হয়েছে।
তবে, এই ধারার অধীনে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী দণ্ড আরোপের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করতে পারবেন। আপিল কর্তৃপক্ষ আদেশ বহাল, বাতিল বা পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখবে। রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ না থাকলেও, দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট আবেদন করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই এক্ষেত্রে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
সরকারের এই উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদে রোববার সচিবালয়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভ করেছেন কর্মচারীরা। তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে সচিবালয়ের বাইরের কর্মচারীরাও। আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যদি এই আইন সংশোধন করা হয়, তাহলে উপদেষ্টাদের সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না।