বিডিটি নিউজ ডেস্ক।
শুক্রবার (৬ জুন) ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি ‘শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ’ সম্পন্ন করেছেন হাজীরা। মক্কার উপকণ্ঠের মিনায় অনুষ্ঠিত এই রীতির মাধ্যমে হজের আনুষ্ঠানিকতার শেষ দিকে পৌঁছান ১৬ লাখেরও বেশি মুসলমান। এর সঙ্গে শুরু হয়েছে মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহার উদ্যাপন।
ফজরের আগেই হাজীরা মিনার উপত্যকার তিনটি প্রতীকী স্তম্ভে সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করেন। ছায়াযুক্ত ও অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে এবারের রীতি ছিল তুলনামূলক সহজ। এই রীতির পেছনে রয়েছে নবী ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই কাহিনি, যেখানে তিনি কোরবানির আদেশ পালনকালে শয়তানের বাঁধার মুখোমুখি হন।
মিসরের এক হাজী ওয়ায়েল আহমেদ আবদেল কাদের বলেন, “আমরা প্রবেশ করলাম এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পাথর নিক্ষেপ শেষ করলাম।” গিনির হাওয়াকিতা বলেন, “পাথর ছুঁড়ে আমি স্বস্তি পেয়েছি এবং গর্বিত।”
এর আগের দিন হাজীরা আরাফাতের ময়দানে জমায়েত হয়ে দোয়া ও কোরআন তেলাওয়াতে অংশ নেন। অনেকে আরোহণ করেন সেই পাহাড়ে, যেখানে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজে শেষ খুতবা প্রদান করেছিলেন। তবে তীব্র গরম এবং সরকারি সতর্কতার কারণে দুপুরের পর জমায়েত কিছুটা কমে আসে।
চরম তাপমাত্রা মোকাবেলায় এবছর সৌদি কর্তৃপক্ষ নানাবিধ প্রস্তুতি নেয়। ২০২৪ সালের হজে ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১,৩০১ জন হাজীর মৃত্যু ঘটে, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন অনুমতি ছাড়া হজে অংশ নেওয়া হাজী। তাদের অনেকেরই ছিল না যথাযথ আবাসন বা চিকিৎসা সহায়তা।
এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সৌদি সরকার অবৈধ হাজীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করে। ফলে এবার তুলনামূলকভাবে হজ পালনে ভিড় কম দেখা গেছে।
চলতি বছর হজযাত্রীর সংখ্যা গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাদ দিলে এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত। গত বছর হজে অংশ নিয়েছিলেন ১৮ লাখ মুসলমান।
হজের অনুমতিপত্র সাধারণত কোটা ভিত্তিতে দেশগুলোকে দেওয়া হয় এবং লটারির মাধ্যমে বন্টন করা হয়। কিন্তু ব্যয়বহুল ব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই অনুমতি না নিয়ে হজে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন, যা ঝুঁকিপূর্ণ।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৫ সালে মিনার এই স্থানে পদদলনের ভয়াবহ ঘটনায় ২,৩০০ জনেরও বেশি হাজীর মৃত্যু হয়েছিল। সেই বিপর্যয়ের পর হজ ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করা হয়েছে।
প্রতি বছর হজ ও উমরাহ সৌদি আরবের জন্য বিলিয়ন ডলার আয়ের উৎস। এই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সৌদি রাজপরিবারের জন্য গৌরবের প্রতীক, যেখানে বাদশাহ নিজেকে “দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক” হিসেবে পরিচয় দেন।
হজের সমাপ্তির সঙ্গেই মুসলিম বিশ্বে শুরু হয় ঈদুল আজহার উৎসব, যা পশু কোরবানির মাধ্যমে পালিত হয়। কোরবানির পশুর মধ্যে থাকে ছাগল, ভেড়া, গরু কিংবা উট।