ডেস্ক নিউজ।
গাজাগামী একটি ত্রাণবাহী নৌকা আটক করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী, যেখানে ছিলেন সুইডিশ জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ জন মানবাধিকার কর্মী। সোমবার সন্ধ্যায় নৌকাটি ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে পৌঁছালে তাদের আটক করা হয়। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আটককৃতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তাদের রামলেতে একটি আটক কেন্দ্রে রাখা হবে, পরে নির্বাসন করা হবে।
গ্রেটা থুনবার্গ ও অন্যান্য কর্মী “ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন”-এর উদ্যোগে গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে এই যাত্রায় অংশ নেন। আয়োজকদের দাবি, নৌকাটিতে শিশুদের খাদ্য ও ওষুধসহ জরুরি ত্রাণ ছিল এবং এটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় বেআইনিভাবে থামানো হয়েছে। থুনবার্গ এক বার্তায় সুইডিশ সরকারকে তার মুক্তির জন্য চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান।
তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, নৌকায় এক ট্রাকেরও কম পরিমাণ ত্রাণ ছিল এবং এটি একটি জনসংযোগমূলক প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। ইসরায়েলের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেন, “গ্রেটা কোনো সাহায্য আনছিল না, বরং সে নিজেকে আনছিল।”
আটককৃতদের মধ্যে ফরাসি এমইপি ও ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রিমা হাসানসহ ছয়জন ফরাসি নাগরিকও রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই ঘটনাকে “অগ্রহণযোগ্য” উল্লেখ করে দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, যাত্রীরা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং তাদের জন্য কনস্যুলার সহায়তার প্রয়োজন নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যঙ্গ করে থুনবার্গকে “রাগ নিয়ন্ত্রণের ক্লাসে” পাঠানোর পরামর্শ দেন।
এই ঘটনার পটভূমিতে রয়েছে গাজার ওপর চলমান অবরোধ এবং সাম্প্রতিক ইসরায়েলি সামরিক অভিযান। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া সংঘর্ষে গাজায় ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য। ধ্বংস হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৯০% বাসিন্দা। বর্তমানে প্রায় সব মানুষ আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
যদিও ইসরায়েল বলছে তারা প্রতিদিন সহায়তা পাঠাচ্ছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, অবরোধ ও সামরিক অভিযান চলতে থাকলে গাজা দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে। যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় রয়েছে, এবং ইসরায়েল বলছে, হামাসকে সম্পূর্ণ পরাজিত না করা পর্যন্ত তাদের অভিযান চলবে।