আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে উত্তেজনার মধ্যেই ইসরায়েলের পাঠানো অন্তত ১৩০টিরও বেশি ড্রোন গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে ইরান। সোমবার (২৩ জুন) দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, সীমান্ত লঙ্ঘন করে পাঠানো এসব ড্রোনের বেশিরভাগই সফলভাবে শনাক্ত ও ধ্বংস করা হয়েছে।
ধ্বংস হওয়া ড্রোনগুলোর মধ্যে ছিল ইসরায়েলের উন্নত প্রযুক্তির হার্মেস ৯০০, হার্মেস ৪৫, হেরন এবং আত্মঘাতী ‘হারপ’। ইরান বলছে, এই হামলা প্রতিহত করতে তাদের নিজস্ব তৈরি রাডার সিস্টেম, জ্যামিং প্রযুক্তি ও অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। সামরিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ড্রোন প্রতিহতের এমন নজির সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরল।
এর আগে, চলতি মাসের ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালায়। ওই হামলায় নিহত হন দেশটির সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আন্বিয়া কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল গোলাম আলি রাশিদসহ ছয়জন শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী।
এই ঘটনায় মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ইরান এটিকে আন্তর্জাতিক আইন ও সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় শুরু হয় ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এর নেতৃত্বে চালানো এই অভিযানে ব্যবহার করা হয় শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। লক্ষ্যবস্তু ছিল ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি, গোয়েন্দা ইনস্টলেশন ও তেল-আবিবের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অভিযান ছিল সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত। এটি ইরানের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতা ও সামরিক প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। তেহরান এটিকে কেবল প্রতিশোধ নয়, বরং একটি কৌশলগত বার্তা হিসেবেও ব্যাখ্যা করেছে।
এক জ্যেষ্ঠ আইআরজিসি কমান্ডার বলেন, “ইরান আর চুপ করে সহ্য করবে না। যেসব রক্ত অন্যায়ভাবে ঝরানো হয়েছে, তা ইমান ও প্রতিশোধ দিয়ে প্রতিফলিত হবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই প্রতিক্রিয়া শুধু একটি আঞ্চলিক সন্ত্রস্ত পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয় না—এটি একটি বৃহৎ ভূরাজনৈতিক বার্তাও বহন করে, যা ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের উদ্দেশে সুস্পষ্ট হুঁশিয়ারি।