মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ভয়াবহ সামরিক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি ও ইরানি হামলায় উভয়পক্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। এরমধ্যে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বীরশেবা শহরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছেন চারজন এবং ইরানের গিলান প্রদেশে বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন নয়জন।
এই সংঘাতের সূত্রপাত হয় ট্রাম্প ঘোষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, যুদ্ধবিরতির শুরুর আগেই ইরান তাদের ওপর একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ তেহরানে ‘তীব্র প্রতিশোধমূলক’ হামলার নির্দেশ দেন।
ইরান অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, বরং যুদ্ধবিরতির অগ্রাহ্য করে ইসরায়েলই প্রথম হামলা চালিয়েছে তেহরানের আবাসিক এলাকাগুলোতে। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দাবি করেছে, ইসরায়েলের হামলায় বহু নারী ও শিশুও হতাহত হয়েছে। হামলায় ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানী সেদিঘি সাবেরও নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়।
এদিকে ওয়াশিংটন থেকে ন্যাটো সম্মেলনে রওনা দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে কঠোর ভাষায় ভর্ৎসনা করে বলেন, “চুক্তি হতেই তারা এমন বোমাবর্ষণ করেছে, যা আমি আগে কখনও দেখিনি।”
ট্রাম্প আরও বলেন, যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে তিনি মনে না করলেও, ইসরায়েলের আচরণে তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। পরে ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি সরাসরি ইসরায়েলকে উদ্দেশ করে লেখেন, “ওই বোমাগুলো ফেলো না। এটা হবে বড় ধরনের লঙ্ঘন।”
যদিও ট্রাম্পের মতে, যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে ২৪ ঘণ্টায় বাস্তবায়িত হওয়ার কথা, তবে ইরান-ইসরায়েল কেউই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই সমঝোতা স্বীকার করেনি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “যুদ্ধবিরতি নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি।”
অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তেহরানে চালানো অপারেশন রাইজিং লায়ন অভিযানে তারা ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা, সামরিক নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে।
এমন এক সময় এই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যখন ইরাকেও পরপর একাধিক সামরিক ঘাঁটি ও বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা হয়েছে। কেউই এই হামলার দায় স্বীকার না করলেও মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক উত্তেজনার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।