ডেস্ক নিউজ।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর সম্প্রতি চালানো এই বোমাবর্ষণের লক্ষ্য ছিল সেগুলোকে অকার্যকর করে দেওয়া। তবে এই হামলার বাস্তব ক্ষয়ক্ষতি এখনো নিরপেক্ষভাবে যাচাই হয়নি।
এই সাম্প্রতিক সংঘাত আসলে এক জটিল ইতিহাসের ধারাবাহিকতা—যার সূচনা হয়েছিল ২০০৩ সালে, যখন জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা প্রকাশ করে যে, ইরান গোপনে ১৮ বছর ধরে একটি পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। এরপর থেকেই এটি হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক কূটনীতির কেন্দ্রীয় ইস্যু। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিশ্বাস করে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে—যা মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্যে বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
এনপিটি চুক্তির সদস্য হয়েও ইরান গোপনে কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহল—এমনকি রাশিয়া ও চীনও—তেহরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে। যদিও তৎকালীন ইরান সরকারের দাবি ছিল, এই কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
যুক্তরাষ্ট্রের চার প্রেসিডেন্ট—বুশ, ওবামা, ট্রাম্প ও বাইডেন—বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করলেও লক্ষ্য ছিল একটাই: ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে। ওবামার সময়ে ২০১৫ সালে জেসিপিওএ চুক্তির মাধ্যমে কিছুটা অগ্রগতি হলেও ট্রাম্পের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ও নতুন নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। এরপর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ৬০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়—যা অস্ত্র তৈরির মাত্রার কাছাকাছি।
তবে ইরানের এই পারমাণবিক কর্মসূচি আজ হঠাৎ গড়ে ওঠেনি। এর গোড়াপত্তন ঘটে ১৯৫০-এর দশকে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাটমস ফর পিস’ উদ্যোগের মাধ্যমে। ঠান্ডা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৎকালীন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে যুক্তরাষ্ট্র একটি গবেষণা চুল্লি ও উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দেয়। ইরান ১৯৭০ সালে এনপিটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যদিও সমান্তরালভাবে অস্ত্র তৈরির চিন্তাও তখন থেকেই ছিল।
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর প্রথমদিকে নতুন সরকার এই কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা পারমাণবিক প্রযুক্তির কৌশলগত গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং দেশীয় বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় গোপনে কর্মসূচি পুনরায় শুরু করে।
এই জটিল ইতিহাসের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেই উদ্যোগ—যা শান্তির উদ্দেশ্যে শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্র উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। অনেক গবেষকের মতে, ‘অ্যাটমস ফর পিস’ প্রকল্প শান্তিপূর্ণ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অস্ত্রের সম্ভাবনাও উন্মুক্ত করে দেয়। ভারত ও পাকিস্তান এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ, যদিও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে একই কাঠামো অস্ত্রায়ন ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে।
এই মুহূর্তে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সামরিক হামলার ক্ষয়ক্ষতি, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপ—সবই এখন বিশ্ব কূটনীতির নজরে।