জাপান ইন্টারনেটের গতিতে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছে, যা প্রযুক্তি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজি (NICT) ঘোষণা করেছে, তারা পরীক্ষামূলকভাবে প্রতি সেকেন্ডে ১.০২ পেটাবিট (Pbps) গতিতে তথ্য স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছে। এই অবিশ্বাস্য গতির অর্থ হলো, চোখের পলকে পুরো নেটফ্লিক্স লাইব্রেরি ডাউনলোড করে ফেলা যাবে। গত জুন মাসেই এই যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করা হয়েছে।
এই অভূতপূর্ব সাফল্যের পেছনের কারণ হলো জাপানের অত্যাধুনিক ফাইবার অপটিক প্রযুক্তি এবং নিরন্তর গবেষণা। NICT-এর ফোটোনিক নেটওয়ার্ক ল্যাবরেটরি দল সুমিতোমো ইলেকট্রিক এবং ইউরোপের কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। প্রচলিত ফাইবার অপটিক তারের মতোই পাতলা, মাত্র ০.১২৫ মিলিমিটার ব্যাসের একটি বিশেষ ১৯-কোর বিশিষ্ট অপটিক্যাল ফাইবার কেবল ব্যবহার করে তারা এই গতি অর্জন করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করেও ইন্টারনেটের গতিতে বিপুল উন্নতি আনা সম্ভব।
গবেষকরা ৮৬.১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ফাইবার লুপ ব্যবহার করেছেন, যা ১৯টি পৃথক কোরের মধ্য দিয়ে ২১ বার পুনরাবৃত্তি করে মোট ১ হাজার ৮০৮ কিলোমিটার দূরত্বে ১৮০টি স্বতন্ত্র তথ্যপ্রবাহ একযোগে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। উন্নত ট্রান্সমিটার, রিসিভার এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে সংকেতগুলোকে দীর্ঘ দূরত্বেও অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হয়েছে। এই পদ্ধতি ডেটা স্থানান্তরে রেকর্ড ১.৮৬ এক্সাবিট প্রতি কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড হার অর্জন করেছে।
এই অর্জন কেবল ইন্টারনেটের গতিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের ডিজিটাল বিশ্বকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। ভিডিও স্ট্রিমিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং স্বয়ংক্রিয় গাড়ির মতো ক্রমবর্ধমান ডেটা-নির্ভর প্রযুক্তির জন্য উচ্চগতির নির্ভরযোগ্য সংযোগ অপরিহার্য। এই গতিতে এক সেকেন্ডে প্রায় ১০০ গিগাবাইটের ইংরেজি উইকিপিডিয়া ১০ হাজার বার ডাউনলোড করা যাবে এবং ৮কে মানের ভিডিও এক সেকেন্ডের মধ্যেই নেমে যাবে। এটি ৬জি নেটওয়ার্ক এবং নতুন সাবমেরিন কেবলের উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এই প্রযুক্তি এখনই সাধারণ গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে না, তবে সরকার, ডেটা সেন্টার এবং টেলিকম সংস্থাগুলো এটি তাদের নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ শুরু করবে।
জাপান বরাবরই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের উচ্চগতির রেল নেটওয়ার্ক, উন্নত বিমানবন্দর এবং ভূমিকম্প প্রতিরোধী অবকাঠামোর পাশাপাশি এই ইন্টারনেট গতি প্রমাণ করে যে, তারা ভবিষ্যতে বৈশ্বিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনেও নেতৃত্ব দেবে। এই সাফল্য বিশ্বব্যাপী ডেটা স্থানান্তরের পদ্ধতি এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের ধারণাকে পরিবর্তন করে দিতে পারে, যা এক নতুন ডিজিটাল যুগের সূচনা করবে।