ইসলামি ডেস্ক।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলাম ধর্ম কেবল একটি বিশ্বাস নয়, বরং তা একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব দেশগুলোতে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুশীলন—বিশেষ করে মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়, ইসলামি নৈতিকতার চর্চা এবং শরিয়াহর নির্দিষ্ট দিকগুলো অনুসরণ—দিনের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মরক্কো, মাওরিতানিয়া, ওমান, কুয়েত, ইন্দোনেশিয়া, মালি, সোমালিয়া ও ইয়েমেন—এসব দেশগুলোর নামই উঠে আসে প্রথম সারিতে। এখানে ইসলামী অনুশীলন শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়; রাষ্ট্রীয় আইন, বিচারব্যবস্থা ও সামাজিক কাঠামোতেও এর সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায়।
সৌদি আরবে ইসলামী শরিয়াহর ওপর ভিত্তি করে চলা আইন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় দোকানপাট বন্ধ রাখার ঐতিহ্য ইসলামী জীবনচর্চার সবচেয়ে জোরালো উদাহরণ। একইভাবে ইরানে ধর্মীয় নেতা ও শরিয়াহ-ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা ধর্মীয় নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে।
গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের সর্বশেষ (২০১৭) হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১৮০ কোটির কাছাকাছি, যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় ২৪ শতাংশ। ৫০টির বেশি দেশ আছে যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, আবার ইউরোপ ও আমেরিকার মতো অঞ্চলগুলোতেও মুসলমানদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
ইসলামী জীবনচর্চার অন্যতম দৃশ্যমান দিক হলো মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মসজিদে গিয়ে নিয়মিত জামাতে অংশ নেওয়া এখনো সামাজিকভাবে উৎসাহিত এবং ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে পালন করা হয়।
বহু দেশে ফজরের সময় থেকে শুরু করে এশার নামাজ পর্যন্ত মসজিদে ব্যাপক মুসল্লির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শুক্রবার জুমার নামাজেও বহু জায়গায় রাস্তা পর্যন্ত পূর্ণ হয়ে যায়।
মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর অধিকাংশেই পারিবারিক জীবন, বিবাহ, উত্তরাধিকার, খাদ্যাভ্যাস (হালাল-হারাম) ও পোশাকে ইসলামি অনুশাসনের প্রভাব সুস্পষ্ট। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ইসলামী নৈতিকতা ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবলভাবে প্রচলিত।
ইসলামি জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, মাওরিতানিয়া ও ইরানে রাষ্ট্রীয় আইন শরিয়াহভিত্তিক। অন্যদিকে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো ধর্মনিরপেক্ষ আইন থাকলেও পারিবারিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে শরিয়াহর অনুসরণ করে।
এছাড়া ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারও একটি বড় বিষয়। মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অনেক দেশে স্কুল পর্যায় থেকেই কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এমনকি আফ্রিকান দেশগুলোর অনেক গ্রামেও মাদরাসাভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা ব্যাপক।