সাপের কামড়ে শিশুর মৃত্যু প্রচলিত খবর হলেও, ভারতের বিহার রাজ্যে এক বছরের এক শিশুর কামড়ে একটি আস্ত বিষধর গোখরা (কোবরা) সাপের মৃত্যু হয়েছে। এই বিরল ঘটনাটি এখন খবরের শিরোনামে। পশ্চিম চম্পারন জেলার মোহছি বনকাটোয়া গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ নামের এই শিশুটি গত বৃহস্পতিবার এই অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটিয়েছে।
গোবিন্দের দাদি মতিসারি দেবী বিবিসিকে জানান, “ওর মা তখন ঘরের পিছন দিকে চুলা জ্বালানোর কাঠ গুছাচ্ছিল। পাশেই খেলছিল গোবিন্দ। তখনই সাপটা বেরিয়ে আসে।” তিনি বলেন, “সাপটাকে দেখেই গোবিন্দ সেটাকে ধরে এক কামড় বসিয়ে দেয়। তখনই আমরা সবাই খেয়াল করি যে ওটা একটা গেহুঁওন সাপ।” বিহারের ওই অঞ্চলে কোবরা সাপকে স্থানীয়ভাবে ‘গেহুঁওন’ সাপ বলা হয়।
মতিসারি দেবী আরও বলেন, “দাঁত দিয়ে সাপটাকে কামড় দেওয়ার পর কিছুক্ষণের জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল গোবিন্দ। ওকে আমরা প্রথমে মঞ্ঝোলিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ওকে বেতিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখন বাচ্চা সুস্থ আছে।” মঞ্ঝোলিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক নেয়াজ বলেন, “শিশুটি শনিবার সন্ধ্যাবেলাতেই বাড়িতে ফিরে এসেছে। ওকে নিয়ে সবাই খুব আলোচনা করছে। শ্রাবণ মাসে সাপ বেরোনোটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এরকম ঘটনা আমাদের এলাকায় প্রথম হলো।”
বেতিয়া সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিভাগের ডা. কুমার সৌরভ, যিনি শিশুটির চিকিৎসা করেছেন, তিনি জানান, “শিশুটিকে যখন ভর্তি করার জন্য আনা হয়েছিল, তখন ওর চেহারা একটু ফুলে গিয়েছিল। মুখের আশপাশটা ফোলা ছিল। বাড়ির লোক আমাদের জানায় যে সাপের মুখের পাশে কামড় দিয়েছিল শিশুটি আর সাপের দেহের কিছুটা বোধহয় খেয়েও ফেলেছিল।” ডা. সৌরভ আরও বলেন, “আমার হাতে একই সময় দুটি শিশু রোগী ছিল তখন। একটি শিশুকে কোবরা সাপ কেটেছিল আর এই শিশুটি সাপকেই কামড়ে দিয়েছিল। দুটি শিশুই সম্পূর্ণ সুস্থ আছে এখন।”
সাপের বিষের কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করে ডা. সৌরভ বলেন, “কোবরা সাপ যখন মানুষকে ছোবল মারে তখন তার বিষ আমাদের রক্তে চলে যায়। রক্তে বিষ মিশে যাওয়ার ফলে নিউরোটক্সিসিটি হয়, আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে। এর থেকে মৃত্যুও হতে পারে।” তবে, “যখন কোনো মানুষ কোবরা সাপকে কামড়িয়ে দেয়, তখন মুখ দিয়ে ওই বিষ আমাদের পাচনতন্ত্রে চলে যায়। মানবদেহ ওই বিষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, আর বিষটা বেরিয়ে যায়।” তিনি সতর্ক করে দেন যে, যদি কোনো মানুষের খাদ্যনালীতে আলসার বা অন্য কোনো ক্ষত থাকে এবং সেই অবস্থায় সাপকে কামড়ানো হয়, তবে রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান, যার মধ্যে ভারতেই এই সংখ্যা প্রায় ৫৮ হাজার। এজন্যই ভারতকে ‘সর্প-দংশনের রাজধানী’ বলা হয়ে থাকে। বিহারের রাজ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থাপনার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ওই রাজ্যে সাপের কামড়ে ৯৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়কালে সাপের ছোবল খেয়ে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ১৭,৮৫৯ জন। তবে, কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সাপে কাটা বেশিরভাগ রোগীই হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন না, ফলে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কম জানা যায়। সাপের কামড়ে মৃত্যুর ৭০ শতাংশ ঘটনাই বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, রাজস্থান এবং গুজরাটে ঘটে থাকে।