1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. suma59630@gmail.com : ফাতেমা আকতার তোয়া : ফাতেমা আকতার তোয়া
  3. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  4. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
  5. wasifur716@gmail.com : Wasifur Rahaman : Wasifur Rahaman
মার্চ ফর জাস্টিস অংশ নেয়া  শিক্ষকদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি - বিডিটেলিগ্রাফ | Bangla News Portal, Latest Bangla News, Breaking, Stories and Videos
রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সামরিক ও দলীয় প্রভাবে ইসি কাজ করছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী শাহবাগে ছাত্রদলের সমাবেশে রাকিবুল: ছাত্রদলকে রুখতে পারবে না কেউ ইসলামে বন্ধুর মর্যাদা ও সঠিক বন্ধু নির্বাচনের গুরুত্ব কক্সবাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের সাথে কুকুরের ধাক্কা আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনেই বিচার পরিচালিত হবে: তাজুল এনসিপির সমাবেশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিলেন সারজিস মার্চ ফর জাস্টিস অংশ নেয়া  শিক্ষকদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি ত্রয়োদশ নির্বাচনে বিএনপি’র ১০০ আসন চূড়ান্ত, ২০০ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী দেড় হাজার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ খুলছে আজ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন ডিসি নিয়োগের প্রস্তুতি

মার্চ ফর জাস্টিস অংশ নেয়া  শিক্ষকদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

  • সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৮ জন খবরটি পড়েছেন

বুটেক্স প্রতিনিধি, সাইফুল ইসলাম শাহেদ

২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশজুড়ে সংঘটিত এক ঐতিহাসিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তি পায় দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের কবল থেকে। ছাত্রসমাজ, সাধারণ জনগণ ও দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণে এই আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। তৎকালীন সরকার-নিয়ন্ত্রিত দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বহু মানুষ প্রশাসনিক চাপ, ভয়ভীতি এবং চাকরি হারানোর আশঙ্কায় সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত হতে পারেননি। তবে তাদের মধ্যেও কিছু সাহসী মানুষ ছিলেন, যারা সকল বাধা উপেক্ষা করে এই আন্দোলনের প্রতি সরাসরি সংহতি প্রকাশ করেন। তাঁদের এই অবস্থান আন্দোলনের ন্যায়সঙ্গত উদ্দেশ্যকে আরও শক্ত ভিত্তি দেয়।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়েও (বুটেক্স) ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক আন্দোলনের সময় এক অনুরূপ চিত্র দেখা যায়। আন্দোলনের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেও, তারা শিক্ষকদের পাশে পায়নি। তবে সময়ের প্রবাহে পরিস্থিতি বদলায়। চলমান আন্দোলনের এক পর্যায়ে, সকল প্রশাসনিক চাপ ও শঙ্কা উপেক্ষা করে বুটেক্সের ১৩ জন নির্ভীক শিক্ষক ৩১ জুলাই ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা কেবল ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেননি, বরং চলমান দমন-পীড়ন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রতিবাদ জানান। শিক্ষার্থীদের কাছে এই পদক্ষেপ হয়ে ওঠে এক সাহসী প্রেরণার উৎস। আজ, কালের পরিক্রমায় এক বছর পর সেই ‘মার্চ ফর জাস্টিস’-এর প্রেক্ষাপট থেকে তাঁদের প্রত্যাশা ও এই এক বছরে তাঁদের প্রাপ্তি বিষয়ে কথা বলেছেন বুটেক্সের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম শাহেদ।

ড. শেখ মোঃ মামুন কবীর, অধ্যাপক, টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

২০২৪ সালের ৩১ জুলাই ‘মার্চ ফর জাস্টিস’-এর আয়োজন ছিল ছাত্রসমাজের একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। কোটা বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের প্রতিবাদ থেকে শুরু হয়ে ‘জুলাই গণহত্যা’র পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিই—নীরব থাকা মানে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া। জানতাম, ঝুঁকি আছে—চাকরি হারানো, মামলা, এমনকি গুম হওয়ার আশঙ্কাও ছিল। তবুও আমরা দাঁড়িয়েছিলাম সত্যের পক্ষে। এক বছর পেরিয়ে আরেক জুলাই এসেছে। প্রাপ্তি? আমরা ভয়কে জয় করেছি। আজ বুটেক্সে অনেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে—এটাই আন্দোলনের প্রকৃত সাফল্য। যদিও অনেক প্রিয় মুখ হারিয়ে গেছে, তবুও আমরা জানি, এই আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। আমাদের প্রত্যাশা—বুটেক্স হোক নৈতিক, মানবিক ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো প্রকৌশলীর প্রস্তুতিমাঠ। এখানে যেন ছাত্র-শিক্ষক পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন। ক্যাম্পাস হোক ভয়মুক্ত, জবাবদিহিমূলক এবং চিন্তার স্বাধীনতায় পরিপূর্ণ। ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ আমাদের শুধু প্রতিবাদ করতে শেখায়নি—মানুষ হতে শিখিয়েছে।

ড. মোঃ সুলতান মাহমুদ, সহযোগী অধ্যাপক, ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

আমার স্বাধীনতাবোধ থেকে আমি বিশ্বাস করি, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের মানুষকে কার্যত গোলামে পরিণত করেছিল। ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, নিরাপত্তা—কোনো কিছুই ছিল না। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুম, বিচারহীনতা ও দুর্নীতি আমাদের কার্যকর নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়েছিল। হাসিনা সরকারের পাঁচটি প্রধান অপরাধ—ভোটাধিকার হরণ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস, এবং দেশবিরোধী আন্তর্জাতিক চুক্তি। এদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন” যখন শাসকগোষ্ঠীকে চাপে ফেলে, তখন “মার্চ ফর জাস্টিস”-এর ডাকে সাড়া দিয়ে আমি ও কয়েকজন সহকর্মী শহীদ মিনারে দাঁড়াই। ভয় ছিল, তবু আত্মাকে রক্ষা করতে সাহস করি।

আল্লাহর কৃপায় আন্দোলন সফল হয়েছে, বিচার চলছে। বুটেক্স প্রশাসনও এই স্পিরিট গ্রহণ করে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে, যা প্রশংসনীয়। এখন দরকার একাডেমিক এক্সিলেন্স, মেরিটোক্রেসি, রুল-অব-ল, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও শূন্য রাজনীতিকরণ।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় থাকলে ভবিষ্যতেও বিশ্ববিদ্যালয় বহুমাত্রিক দূষণ থেকে রক্ষা পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

ইহসান ইলাহি সাবিক, প্রভাষক, হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগ।

জুলাই আন্দোলন, বিশেষ করে “মার্চ ফর জাস্টিস” ও লাল ফিতা, আমার কাছে এক নবজাগরণের প্রতিচ্ছবি। এটি ছিল তারুণ্যের অদম্য স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম, জালিম শক্তির বিরুদ্ধে এক সাহসী ন্যায়যুদ্ধ।

এই প্রতিরোধ ছিল শুধু শাসকদের নয়, তাদের স্বার্থান্ধ ও নীরব সহযোগীদের বিরুদ্ধেও। শিক্ষকদের আত্মরক্ষামূলক নিরবতার বিরুদ্ধে এক প্রতীকী চিমটি ছিল এটি। আমরা চেয়েছিলাম এক নতুন বাংলাদেশ—যেখানে ইনসাফ, কল্যাণ ও মানবিকতা রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে।

যুদ্ধটা এখনও চলছে। কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের জন্য দরকার নির্দলীয় প্রশাসন, নৈতিক শিক্ষা, মানবিক স্বাস্থ্যখাত, দুর্নীতিমুক্ত অর্থনীতি ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা। এগুলোই একটি প্রকৃত বিপ্লবের উপাদান।

গত এক বছরে অনেক কিছু বাকি থাকলেও, আশার আলো দেখা যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদীদের পতন শুরু হয়েছে, বিচার এগোচ্ছে, আপোসহীন তরুণ নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে। এক আত্মমর্যাদায় বলীয়ান প্রজন্ম গড়ে উঠছে, যারা বাংলাদেশি ও মুসলিম পরিচয়কে ধারণ করে আধিপত্যবাদকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত।

এই আশার আলোই তো প্রথম বিজয়।

নুরুন্নেসা অর্পা, সহকারী অধ্যাপক, অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

মার্চ ফর জাস্টিস আমাদের মধ্যে অন্যায়কে প্রশ্ন করার সাহস জুগিয়েছে। বুটেক্সে আমরা তখন কণ্ঠ তুলেছিলাম শুধু ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে—নির্বিচারে বৈষম্য, রাজনৈতিক দখলদারিত্ব আর সম্মানের সংকটের বিরুদ্ধে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল একটি সমমর্যাদার শিক্ষাঙ্গন, যেখানে শিক্ষক-ছাত্র উভয়েই সম্মানের সাথে কাজ করতে পারবে।

এক বছরে কিছু পরিবর্তন হয়েছে—রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে, ৫১তম ব্যাচ ক্লাস শুরু করেছে নতুন আশার বার্তা নিয়ে। কিন্তু অফলাইন-অনলাইনে অপমানজনক মন্তব্য, আস্থা সংকট, কিংবা দমনমূলক আচরণ এখনও বিদ্যমান। আমাদের চাওয়া খুবই সাধারণ—ভালো কাজের স্বীকৃতি থাকুক, বৈষম্য না থাকুক, কেউ যেন প্রতিবাদী ভূমিকার জন্য হেনস্তার শিকার না হয়।

স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে, এখন সেটা রক্ষা করার সময়। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আজ হুমকির মুখে—বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের উচিত এই খাতে ইতিবাচক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেওয়া। প্রাক্তনদের সাথে একসাথে কাজ করে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা আমাদের দায়িত্ব।

তাবাসসুম ফেরদৌস, ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, সহকারী অধ্যাপক

২০২৪ সালের ৩১ জুলাই ‘মার্চ ফর জাস্টিস’-এ অংশ নেওয়া ছিল একান্ত বিবেকের তাড়না থেকে। রাস্তায় আমাদের ভাইবোনদের মতো শিক্ষার্থীদের গুলিতে মারা যেতে দেখে চুপ থাকতে পারিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন লাল ফিতা বেঁধে মিছিলে অংশ নেন, আমি অভিভূত হই। পরবর্তীতে ড. সুলতান মাহমুদ স্যারের সাহসী আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা বুটেক্সের কয়েকজন শিক্ষক শহীদ মিনারে দাঁড়াই—একটি ন্যায়ের দাবি নিয়ে, ভয়কে পাশ কাটিয়ে।

চাপ অবশ্যই ছিল। ছাত্রলীগের কিছু সদস্য আমাদের ছবি তুলে পাঠাচ্ছিল, কিন্তু আমরা কেউ বিচলিত হইনি। মনে হয়েছিল, এই কর্মসূচিতে না থাকলে বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতাম।

এই এক বছরে বড় পরিবর্তন হয়েছে—বুটেক্স আজ রাজনীতিমুক্ত। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে পড়াশোনা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারছে। অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, যার পূর্ণ ফলাফল সময়েই দেখা যাবে।

আমার একটাই প্রত্যাশা—বুটেক্স চিরকাল রাজনীতি ও বৈষম্যমুক্ত থাকুক, আর গড়ে উঠুক একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে জ্ঞান, গবেষণা ও মানবিকতা হবে কেন্দ্রীয় চেতনা।

তৌফিকা সিদ্দিকা, সহকারী অধ্যাপক, ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

আমরা অনেকেই ভেতরে ভেতরে চাচ্ছিলাম —কিছু একটা হোক, প্রতিবাদ হোক। পরে সুলতান স্যার উদ্যোগ নেন, আমি ও তনিমা ম্যাম রাজি হই। এরপর স্যার-ম্যামদের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করলে সবাই সতস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। যদিও সুলতান স্যারের ওপর চাপ ছিল, তবুও উনি সাহস দেখিয়েছেন। আমাদের কারো ওপর সরাসরি কিছু বলা হয়নি, তবে আমরা সবাই জানতাম—এত অন্যায়ের পর আর চুপ থাকা যায় না।

আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রতিবাদের মাধ্যমে শিক্ষকদের দায়বদ্ধতার একটা দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। এখন ক্যাম্পাসে আর আগের মতো “ডার্টি পলিটিক্স” দেখতে হচ্ছে না, যা বড় প্রাপ্তি। ভবিষ্যতে যেন আবার কেউ নিরীহ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের শিকার না করে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

স্বজনপ্রীতি, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ বজায় থাকুক, যেখানে পুরো বুটেক্স পরিবার একসাথে কাজ করবে। আমরা চাই—এই বিশ্ববিদ্যালয় কেবল প্রযুক্তি নয়, বরং ন্যায়, সৌহার্দ্য ও গৌরবের প্রতীক হয়ে উঠুক।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2025
Theme Customized By BreakingNews