প্রতিনিধি, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বেড়িবাঁধ থেকে অবৈধভাবে স্থাপন করা নাইন্টি পাইপ অপসারণ করায় বাঁধা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার ৩১ আগস্ট বিকাল ৫টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশল মোঃ ফরিদুল ইসলাম, পাউবোর কার্যসহকারী তুষার বর্মনসহ পাউবো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকাশ্যে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য বিকাশ মন্ডল ও রবীন্দ্রনাথ পথ আটকিয়ে ও মোবাইল ফোনে হুমকি দেন বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন সূত্রে জানা গেছে, জনস্বার্থ ও বাঁধের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পাউবোর সাতক্ষীরা অঞ্চলের পোল্ডারসমূহের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ভিতরে অবৈধভাবে নির্মিত নাইন্টি পাইপসহ সকল স্থাপনাসমূহ অপসারণের নির্দেশ দেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীর দুর্গাবাটি এলাকার খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ থেকে অবৈধভাবে বসানো নাইন্টি পাইপ অপসারণ করা হলে পাউবো কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রকাশ্যে ও মোবাইলে এ হুমকি দেওয়া হয়। গত ২৯ জুলাই থেকে থেকে ৪ দিন মাইকিং করা হয় নাইন্টি পাইপগুলো অপসারণের জন্য। সেখানে প্রচারের তিন দিন পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে অবৈধ সকল নাইন্টি পাইপ অপসারণের কথা বলা হয়।
হুমকির বিষয়ে অভিযোগ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশল মোঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রোববার সকালে আমরা ওই এলাকায় অবৈধভাবে বসানো নাইন্টি পাইপ অপসারণে যায়। এরপর বিকালে পশ্চিম দুর্গাবাটি এলাকা থেকে নাইন্টি পাইপ অপসারণ করে ফেরার পথে প্রথমে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য বিকাশ মণ্ডল আমাদের পথ আটকিয়ে পাইপ অপসারণের কারণ জানতে চান। এ সময় আমরা বাঁধের ঝুঁকির কথা জানানোসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের কথা জানালে, ইউপি সদস্য বিকাশ মণ্ডল ক্ষুব্ধ হন এবং আমাদের প্রকাশ্যে হুমকি দেন। পরে বিকাল ৫টার দিকে আমাদের (পাউবোর) কার্যসহকারী তুষার বর্মনের মোবাইল ফোনে জীবননাশের হুমকি ও গালিগালাজ করা হয়।
ওই পাউবো কর্মকর্তা আরো বলেন, এ ধরনের হুমকি সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার শামিল। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করেছি।
পাউবোর (শ্যামনগর পওর উপ-বিভাগ)-এর কার্যসহকারী তুষার বর্মন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অবৈধ নাইন্টি পাইপ অপসারণ করায় ০১৭১৫-৬৪৫৬৯৪ এই নাম্বার থেকে আমাকে জীবননাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। যার কল রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বিকাশ মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে হুমকির বিষয়ে অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি শুধুমাত্র আমাদের এলাকার গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে জানতে চেয়েছি কেন আমাদের না বলে নাইন্টি পাইপ ভাঙা হলো। পাউবোর পক্ষ থেকে পূর্বে বেড়িবাঁধ থেকে নাইন্টি পাইপ অপসারণের কথা জানানো হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, গত ১২ তারিখে আমাদেরকে জানানো হয়েছিল কিন্তু কিছু পাইপ সরানো হলেও সবগুলো সরানো হয়নি।
এ ঘটনায় মোবাইলে হুমকি দেয়া ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি তার নাম রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করে বলেন, আমার নাইন্টি পাইপটা ভেঙে ফেলার কারণে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এজন্য রাগের মাথায় আমি একটু বকাবকি করেছি। তবে এটি তার ভুল হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন আমি সেটি প্রত্যাহার করছি।
এদিকে এঘটনার কয়েকটি অডিও ও কল রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। সেখানে বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য বিকাশ মন্ডলের কথাপোকথনের এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক পাউবো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্য করে ‘পিটুনি দিতে হবে’ বলে উল্লেখ করার কথা শোনা গেছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, এলাকার মানুষের ক্ষতি হচ্ছে বিষয়ে ওই কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে কথা বলা হয়নি, বলা হয়েছে তাদেরকে (পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের) যারা উস্কানি দিচ্ছে ও চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছো তাদেরকে উল্লেখ করে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (শ্যামনগর পওর উপ-বিভাগ) মো: ইমরান সরদার জানান, পাউবো কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তারা জানিয়েছে যে, মৌখিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, সরকারি সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাধার মুখে পড়তে হয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।