কম্পিউটার শিক্ষার আলোকবর্তিকা অধ্যাপক শাহ আক্তার
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি।
কুষ্টিয়ার মিরপুরে কম্পিউটার শিক্ষার এক আলোকবর্তিকার নাম অধ্যাপক শাহ আক্তার মামুন। পেশায় একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হলেও তিনি তার শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রায় ৩৭০০জনকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। এসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ ব্যক্তিরা বিভিন্ন সরকারি-বেসবকারি দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। অনেকে আবার প্রশিক্ষণের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
প্রায় ২৫ বছর ধরে নীরবে-নিভৃতে কম্পিউটার শিক্ষায় অবদান রেখে চলেছেন অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক। তার হাত ধরে সাফল্যের দেখাও পেয়েছেন অনেকে। প্রচার বিমুখ এই মানুষটির বদৌলতে বদলে গেছে অনেকের জীবন।
জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগে লেখাপড়া শেষে ১৯৯৪ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর মাহমুদা চৌধুরী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন অধ্যাপক শাহ আক্তার মামুন। তবে পেশাগত দায়িত্ব ছাপিয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য ভালো কিছু করার তাগাদা অনুভব করেন তিনি।
এরপর ২০০০ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর “চলার পথে আপনাকে এক ধাপে এগিয়ে দিতে” শ্লোগানে স্থানীয় মিরপুর নতুন বাজারে বনলতা কম্পিউটার সেন্টার নামে ছোট্ট একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১২ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলোজি, পাবনার রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত হয়। এ ছাড়াও ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারী বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের অনুমোদন পায় এই প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এই ট্রেনিং সেন্টারে দুটি ট্রেড চালু রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠার পর এ পর্যন্ত প্রায় ৩৭০০জন শিক্ষার্থী এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এসব শিক্ষার্থীদেরকে শাহ আক্তার মামুন নিজেই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
জাকারিয়া মুজাহিদ নামে বেসরকারি এক চাকুরীজীবি বলেন, মফস্বল পর্যায়ে এমন একজন ব্যক্তি আছে বিধায় অনেকে এখান থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে জেলা শহরে যেতে হয় না।
শারমিন আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এই প্রতিষ্ঠান থেকে আমি নিজে এবং আমার পরিবারের আরও সদস্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। অনেক দুরের শিক্ষার্থীও অধ্যাপক শাহ আক্তার মামুন স্যারের কাছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে আসেন।
অধ্যাপক শাহ আক্তার মামুন বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে ৪৩ হাজার টাকায় একটি কম্পিউটার কিনে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী নিয়ে বনলতা কম্পিউটারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখানে এখন প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। প্রতিদিন ৪টি ব্যাচে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হয়। কম্পিউটার প্রশিক্ষনার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়াও অনেক পেশাজীবি কম্পিউটার শিখতে আসেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমি ছাড়াও এখনে আরো ৩জন আমার সহযোগী প্রশিক্ষক রয়েছেন। এখানে শুধু মানুষকে কম্পিউটার শিক্ষা দেয়া হয় না এর পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করে তুলতে বনলতা কম্পিউটারে শিক্ষার্থীদের আলাদা ভাবে স্পিকিং ক্লাস করানো হয়। আমার কাছ থেকে কম্পিউটার শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকেই আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন এবং তাঁরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।