খুবি প্রতিনিধি।
মশার কয়েলের বিকল্প হিসেবে ‘বাজ শিল্ড’ নামের এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তাঁদের দাবি, এটি বাজারের প্রচলিত কয়েলের চেয়ে কার্যকর এবং মানবদেহের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
শিক্ষার্থীদের এই উদ্ভাবন সম্প্রতি এফবিসিসিআই ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (এফবিসিসিআই আইআরসি) আয়োজিত প্রতিযোগিতায় সারা দেশের সেরা দশ উদ্ভাবনের মধ্যে স্থান পেয়েছে। উদ্ভাবক দলটি জানিয়েছে, তারা পণ্যটিকে আরও কার্যকর ও সহজ ব্যবহারের উপযোগী করতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশজুড়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি এবং কয়েলের ক্ষতিকর ধোঁয়ার বিকল্প ভাবনা থেকেই এই উদ্ভাবনের সূত্রপাত। শিক্ষার্থীরা জানান, প্রচলিত কয়েল ও ইলেকট্রিক যন্ত্র মশা তাড়াতে খুব একটা কার্যকর নয়, বরং এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
ছয় মাসের গবেষণার ফল হিসেবে তারা তৈরি করেছেন ‘বাজ শিল্ড’, যা প্রাথমিক পরীক্ষায় কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং ময়ূর নদীসংলগ্ন এলাকায় এটি পরীক্ষা করে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দলের সদস্যরা।
এই প্রকল্পের নেতৃত্বে আছেন সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী নিশাত জাহান নাদীরা। দলে রয়েছেন ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজির মো. মুকাররম হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের মো. সৌরভ হোসেন এবং গণিত বিভাগের মিফদুজ্জামান রাতুল।
দলের কারিগরি ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাজ শিল্ড’ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় একটি পচনশীল ব্যাগ এবং তিন ধরনের প্রাকৃতিক, পরিবেশবান্ধব ওষুধ। এগুলো পানির সঙ্গে মিশে এমন যৌগ তৈরি করে, যা মশার দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিন্তু মানুষ থেকে দূরে রাখে। ওষুধের রাসায়নিক ক্রিয়ায় মশার পাকস্থলিতে এক ধরনের প্রোটিন ক্রিস্টাল তৈরি হয়, যা মশা ও লার্ভা দুটোর বংশবিস্তার নষ্ট করে দেয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীরা খুবি ইনোভেশন হাব প্রোগ্রাম থেকে ৫০ হাজার টাকার ফান্ড পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে এফবিসিসিআই আইআরসি ও ইউএনডিপি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় সেরা দশে স্থান পাওয়ায় আরও একটি ছোট ফান্ড পেয়েছেন তাঁরা। এখন তাঁরা এর বাণিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বড় ফান্ডের খোঁজ করছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক উৎকর্ষেই নয়, গবেষণা ও উদ্ভাবনেও নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছে। ‘বাজ শিল্ড’ ভবিষ্যতে দেশের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।