1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. suma59630@gmail.com : ফাতেমা আকতার তোয়া : ফাতেমা আকতার তোয়া
  3. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  4. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
  5. wasifur716@gmail.com : Wasifur Rahaman : Wasifur Rahaman
“বিদ্রোহী”- নজরুলের মীথ ও রূপকের আগুনে গড়া এক অমর কবিতা!  - বিডিটেলিগ্রাফ | Bangla News Portal, Latest Bangla News, Breaking, Stories and Videos
রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫২ অপরাহ্ন

“বিদ্রোহী”- নজরুলের মীথ ও রূপকের আগুনে গড়া এক অমর কবিতা! 

  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১০০ জন খবরটি পড়েছেন

মোঃ আব্দুল আউয়াল।

নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা বাংলা সাহিত্যে এক অনন্যসাধারণ সৃষ্টি, যেখানে কবি বিদ্রোহের স্বরূপকে ফুটিয়ে তুলতে মীথ (পুরাণ) এবং অলঙ্কার, বিশেষত রূপক অলঙ্কারের অসাধারণ ব্যবহার করেছেন।

এখানে ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় মীথ ও রূপক অলঙ্কারের প্রধান দিকগুলি তুলে ধরা হলো:

১. মীথের (Myth) ব্যবহার

নজরুল তাঁর বিদ্রোহীর ‘আমি’-সত্তাকে মহিমান্বিত করতে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের (হিন্দু, মুসলিম ও গ্রিক) বিভিন্ন ধর্মীয় ও পৌরাণিক চরিত্র, স্থান, এবং ঘটনাকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন। এই পৌরাণিক বা ধর্মীয় মীথগুলি কবির বিদ্রোহের বহুমাত্রিকতাকে প্রতীকায়িত করেছে।

 * ভারতীয় (হিন্দু) মীথ:

   * নটরাজ: “মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!” – নটরাজ হলেন মহাদেবের (শিব) ধ্বংসকারী রূপ, যিনি তাণ্ডব নৃত্যের মাধ্যমে প্রলয় আনেন। এই মীথ বিদ্রোহীর ধ্বংসাত্মক শক্তিকে প্রকাশ করে।

   * ভূলোক, দ্যুলোক, গোলক: “ভূলোক দ্যূলোক গোলক ভেদিয়া…” – হিন্দু মতে পৃথিবী, স্বর্গ এবং বিষ্ণুর আবাস (গোলকধাম)। এগুলি অতিক্রম করার বাসনা কবির সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বাধাহীনতার প্রতীক।

   * রুদ্র ভগবান: “মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!” – রুদ্র ধ্বংস ও ক্রোধের দেবতা। কবির ললাটে তাঁর জয়শ্রীর দীপ্তি, যা ধ্বংসের মধ্যেও জয়ের ঘোষণা।

   * ভৃগু: “আমি বিদ্রোহী ভৃগু-ভগবান-বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন” – ঋষি ভৃগু দেবতাদের শ্রেষ্ঠত্ব বিচারের জন্য বিষ্ণুর বুকে পদাঘাত করেছিলেন। এই মীথ প্রচলিত বিধিনিষেধ ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চরম বিদ্রোহের প্রতীক।

   * পরশুরাম, ভীম, ধূর্জটি (শিব), দুর্বাসা (ঋষি), বিশ্বামিত্র (ঋষি), দধীচি (ঋষি) ইত্যাদি: এই চরিত্রগুলি বিভিন্নভাবে শক্তি, ক্রোধ, ধ্বংস, সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা ও আত্মত্যাগকে প্রতীকায়িত করে।

 * ইসলামী মীথ:

   * আরশ: “…খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া/উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!” – ইসলাম মতে আরশ হলো আল্লাহর সিংহাসন, যা সর্বোচ্চ স্থান। এটিকে ছেদ করার প্রত্যয় কবির চরম বিদ্রোহ ও ঊর্ধ্বমুখী শক্তির প্রকাশ।

   * জিব্রাইল: “ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি।” – জিব্রাইল (আঃ) আল্লাহর দূত, যিনি স্বর্গ থেকে ওহী বহন করে আনেন। তাঁর পাখা ধারণের শক্তি কবির প্রচণ্ড ঐশী বা আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়।

   * এস্রাফিল: “আমি ইস্রাফিলের শিঙ্গা, মহা-হুঙ্কার, আমি ত্রিশূল, দুর্বার!/আমি সৃষ্টি ও ধ্বংস!” – এস্রাফিল (আঃ) কিয়ামতের দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেবেন। এই মীথ চূড়ান্ত ধ্বংস এবং নতুন সৃষ্টির বার্তা বহন করে।

২. অলঙ্কার (বিশেষত রূপক অলঙ্কার – Metaphor)

‘বিদ্রোহী’ কবিতায় অলঙ্কারের বিশেষ ব্যবহার এটিকে গতিময়, ব্যঞ্জনাময় এবং অসাধারণ কাব্যিক মহিমা দান করেছে। অলঙ্কারগুলির মধ্যে রূপক (Metaphor) অলঙ্কারটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং প্রভাবশালী।

 * রূপক অলঙ্কার: রূপক অলঙ্কারে একটি বস্তুকে অন্য একটি বস্তুর সাথে অভেদরূপে কল্পনা করা হয়, অর্থাৎ সাদৃশ্যের ভিত্তিতে একটিকে অন্যটির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিদ্রোহী কবিতায় ‘আমি’ সত্তাটি বিভিন্ন বস্তুর সাথে অভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে:

   * ধ্বংসের রূপক: “আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!”, “আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,”, “আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!”, “আমি ধূর্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর” – এই রূপকগুলি বিদ্রোহীর চরম, অপ্রতিরোধ্য এবং ধ্বংসকারী শক্তিকে তুলে ধরে।

   * প্রতীকী রূপক: “আমি চির-উন্নত শির!” (গর্ব ও আত্মমর্যাদার প্রতীক), “আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল।” (আইন ও শৃঙ্খলকে দমনের প্রতীক)

   * বিস্ময় ও সৃষ্টির রূপক: “…উঠিয়াছি চির বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!” (বিস্ময় ও সৃষ্টিশীলতার প্রতীক), “আমি স্রষ্টা-সূদন…” (সৃষ্টিকর্তার ধ্বংসকারী শক্তির প্রতীক)

 * উপমা (Simile): সাদৃশ্যবাচক শব্দ (যেমন – মতো, যেন) ব্যবহার করে তুলনার মাধ্যমে একটি বস্তুকে অন্যটির সঙ্গে তুলনা করা। বিদ্রোহী কবিতায় উপমার ব্যবহারও লক্ষণীয়, তবে রূপকের প্রভাব বেশি।

 * অনুপ্রাস (Alliteration): একই ধ্বনি বা বর্ণ ঘন ঘন ব্যবহার করে শ্রুতিমাধুর্য সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন: “ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া”, “চমকে চেঙ্গিস”, “দূর্ণীতি দুর্গতি”। এটি কবিতার ঝংকার ও গতি বৃদ্ধি করেছে।

‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি কেবলমাত্র একটি কাব্যিক ঘোষণাপত্র নয়, এটি মীথ ও রূপক অলঙ্কারের এক সার্থক সংমিশ্রণ। কবি বিভিন্ন মীথকে তাঁর বিদ্রোহের প্রতীক ও শক্তি-উৎস হিসেবে ব্যবহার করেছেন এবং রূপক অলঙ্কারের মাধ্যমে সেই বিদ্রোহের বিপুলতা, তীব্রতা ও বহুমুখীতাকে মূর্ত করে তুলেছেন। এই শক্তিশালী উপস্থাপনা কবিতাটিকে কালোত্তীর্ণ মর্যাদা দিয়েছে।

-মোঃ আব্দুল আউয়াল। অধ্যক্ষ , ছাতিয়ানতলা স্কুল এ্যান্ড কলেজ,যশোর।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2025
Theme Customized By BreakingNews