যশোরের অভয়নগরে ওভা ফাউন্ডেশন নামে একটি সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সদস্যদের জমানো অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে সমিতির সদস্যরা ওভা ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু দাউদ, সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ জাহানারা বেগম ও অফিস সহকারী সেলিনা আক্তারের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রাজঘাট মাইলপোস্ট এলাকায় যশোর-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন একটি ভবনে ওভা ফাউন্ডেশনের অফিস রয়েছে। উক্ত অফিসের সভাপতি আবু দাউদ ও সম্পাদক নুরুজ্জামানের প্ররোচণায় ২০১৬সাল থেকে অধ্যাবধি উপজেলার রাজঘাট, জাফরপুর, মাইলপোস্ট, গাজীপুর, তালতলা, নওয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক নিম্ন আয়ের নারী-পুরুষ ডিপিএস ও সঞ্চয় বইয়ের মাধ্যমে আনুমানিক অর্ধকোটি টাকা জমা রাখেন।
এর মধ্যে সমিতির সদস্য মিজানের পাঁচ লাখ টাকা, আব্দুর রাজ্জাক ও আসাদুলের চার লাখ টাকা, সলেমান শেখের দেড় লাখ টাকা, বাবুল গাজীর তিন লাখ ২৫ হাজার টাকাসহ শতাধিক সদস্যের অর্ধকোটি টাকা জমা রয়েছে।
রোববার সকালে সরেজমিনে রাজঘাট মাইলপোস্ট এলাকায় ওভা ফাউন্ডেশনের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ওভা ফাউন্ডেশনের অফিস তালাবদ্ধ। ভবনের সামনে ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু দাউদ কে পেয়ে প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষ তাদের জমাকৃত টাকা ফিরে পেতে পাশ বই নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
ভুক্তভোগী সদস্য নাছিমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে জানান, অন্যের বাড়িতে কাজ করে ২০২০ সালে এক লাখ টাকা পাশ বইয়ের মাধ্যমে ওভা ফাউন্ডেশনের জমা দেন। শতকরা ১৫ শতাংশ হারে মুনাফা দেওয়ার কথা থাকলেও তা কোন দিন দেয়া হয়নি। এখন তার জমানো টাকা ফিরে পেতে অফিস তালাবদ্ধ দেখে তিনি কান্নাকাটি করতে থাকেন।
সদস্য মিজান বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ২০১৬ সাল থেকে ওভা ফাউন্ডেশনের পাশ বইয়ে পাঁচ লাখ টাকা জমা দেওয়ার প্রমাণ রয়েছে। টাকা ফেরত পেতে গত একবছর ধরে ঘুরছি। এখন অফিস বন্ধ করে কর্মকর্তারা পালিয়েছে। টাকা ফিরে পেতে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
ওভা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও সম্পাদক টাকা আত্মসাত করেছেন বলে বিক্ষুব্ধ সদস্যরা একই ধরণের অভিযোগ করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে পাওনা টাকা ফিরে পেতে তারা অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে ওভা ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু দাউদ বলেন, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান আমার ১০ লাখ টাকাসহ সদস্যদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। ওই ফাউন্ডেশনের সভাপতি হিসেবে দায় আমার ওপর এসে পড়েছে। কখন কিভাবে পালিয়ে গেছে তা আমি জানি না। বিক্ষুব্ধ সদস্যদের মধ্যে যারা টাকা পাবে আলোচনার মাধ্যমে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। বিষয়টি সম্পর্কে ওভা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুজ্জামানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অভয়নগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিলন কুমার মন্ডল জানান, ওভা ফাউন্ডেশনের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সদস্যদের টাকা আত্মসাতের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এএসআই তিতাশকে অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।