নাটোর প্রতিনিধি।
একসময় প্রভাবশালী কৃষক ছিলেন নাটোরের ময়দান আলী। জমিজমা ছিল, সন্তান-সন্ততি নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সুখের সংসার। কিন্তু আজ বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই মানুষটির শেষ আশ্রয় হয়ে উঠেছে একটি অপরিচ্ছন্ন গোয়ালঘর। পাশেই স্ত্রী জাহেদা বেগম। পাকা ঘর থাকা সত্ত্বেও সন্তানদের ঘরে ঠাঁই হয়নি তাদের।
সোমবার (৭ জুলাই) নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গন্ধে ভরা একটি গোয়ালঘরের এক কোণে চৌকির ওপর শুয়ে আছেন ৮০ বছর বয়সী ময়দান আলী। পাশে ছড়ানো-ছিটানো খাবারের থালা, খড় ও গবাদিপশুর খাবার।
দুই ছেলে ও চার মেয়ের পিতা ময়দান আলী জমিজমা সন্তানদের লিখে দিয়েছেন বহু আগেই। কিন্তু বিনিময়ে জুটেছে অবহেলা ও অবজ্ঞা। বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বর্তমানে উপজেলা ভূমি জরিপ কর্মকর্তা; ছোট ছেলে রবিউল করিম রবি মাছচাষ করেন। দুজনেরই রয়েছে পাকা বাড়ি, কিন্তু বৃদ্ধ বাবা-মা সেখানে আশ্রয় পাননি।
স্ত্রী জাহেদা বেগম বলেন, “ছেলেরা জমি লিখে নিয়েছে। এখন মেয়েরাও আমাদের খোঁজ নেয় না। রবি পাঁচ শতাংশ জমি বেশি নিয়েছে, সেটা আমি ফেরত চাই।”
সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় ছোট ছেলে রবি ‘দা’ হাতে তেড়ে আসেন, অভিযোগ করেন জাহেদার ভাই মতিউর রহমান।
ফোনে বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম জানান, “চাকরির কারণে দূরে থাকি, তবে সাধ্যমতো দায়িত্ব পালন করি। বাবা-মা এখন ছোট ভাইয়ের কাছেই থাকেন, কারণ জমির বড় অংশ সেখানেই।”
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, “অভিভাবক রক্ষণাবেক্ষণ আইনে প্রত্যেক সন্তান বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে বাধ্য। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”