দাম্পত্য জীবন মহান আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। এর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ করে এবং নতুন প্রজন্ম তৈরির সুযোগ পায়। ইসলামে সহবাসকে শুধু জৈবিক প্রয়োজন হিসেবে দেখা হয় না, বরং এটিকে একটি বরকতময় কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়, যদি তা শরীয়তের নিয়ম মেনে করা হয়। সহবাসের পূর্বে পঠিত একটি ছোট দোয়া এই কাজটিকে আরও পবিত্র ও বরকতময় করে তোলে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সহবাসের পূর্বে একটি নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই দোয়াটি পাঠ করার ফলে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং এর মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সন্তানও শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে বলে হাদীসে উল্লেখ আছে।
দোয়াটি হলো:
بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাজাকতানা।”
অর্থ: “আল্লাহর নামে (শুরু করছি)। হে আল্লাহ! আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং শয়তানকে তা থেকে দূরে রাখুন যা আপনি আমাদের দান করবেন (অর্থাৎ সন্তান)।”
এই দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. শয়তানের প্রভাব থেকে সুরক্ষা: এই দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে সহবাসকালে এবং এর ফলস্বরূপ জন্ম নেওয়া সন্তানের উপর শয়তানের কুপ্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, এই দোয়া পড়ে সহবাস করলে যদি সন্তান হয়, তাহলে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
২. বরকত লাভ: দোয়ার মাধ্যমে যেকোনো হালাল কাজ শুরু করলে তাতে আল্লাহর বরকত আসে। সহবাসের পূর্বে এই দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিতে আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হয়।
৩. নেক সন্তান লাভের আশা: শয়তানের প্রভাবমুক্ত সন্তান নেক ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি রাখে। এই দোয়া নেক সন্তান লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে।
৪. আল্লাহর স্মরণ: সহবাসের মতো ব্যক্তিগত মুহূর্তেও আল্লাহকে স্মরণ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। এই দোয়া আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্য ও স্মরণের প্রকাশ ঘটায়।
সহবাস শুরু করার ঠিক পূর্বে এই দোয়া পাঠ করতে হবে। এটি মনের একাগ্রতার সাথে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রেখে পাঠ করা উচিত।
সহবাসের এই দোয়া দাম্পত্য জীবনে গভীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আরও পবিত্র ও অর্থবহ করে তোলে। যখন প্রতিটি ব্যক্তিগত কাজেও আল্লাহর স্মরণ থাকে, তখন সেই জীবন বরকতময় হয়ে ওঠে। এটি কেবল একটি দৈহিক মিলন না হয়ে আধ্যাত্মিক সংযোগের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি সুযোগে পরিণত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, সহবাসের পূর্বে এই ছোট দোয়াটি পাঠ করা একজন মুমিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। এটি আমাদের দাম্পত্য জীবনকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের সুযোগ করে দেয়। আসুন, আমরা এই সুন্নাতকে গুরুত্বের সাথে পালন করি এবং এর মাধ্যমে আমাদের দাম্পত্য জীবনকে আরও সুন্দর ও বরকতময় করে তুলি।