মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ দিন শুক্রবার। এদিন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা শরিক হন জুমার নামাজে। বলা হয়ে থাকে শুক্রবার তথা জুম্মাবার হচ্ছে মুসলিম জাহানের সাপ্তাহিক ঈদ। এদিন যোহরের নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত জুমার নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।
জুমার নামাজের রাকাত সংখ্যাঃ –
১। দুই রাকাত ফরজ:- এটি জুমার নামাজের মূল অংশ এবং এটি আদায় করা ফরজ।
২। চার রাকাত কাবলাল জুমা (ফরজের আগে):- ফরজ নামাজ আদায়ের আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া হয়।
৩। চার রাকাত বাদাল জুমা (ফরজের পরে):- ফরজ নামাজ আদায়ের পর চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া হয়।
জুমার নামাজের নিয়ত কাবলাল জুমা (ফরজের আগে) চার রাকাত সুন্নতের নিয়ত:-
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি কাব্লাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
(অর্থ: আমি আল্লাহর জন্য চার রাকাত কাবলাল জুমা সুন্নত নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম।)
জুমার ফরজ দুই রাকাত নামাজের নিয়ত:- “নাওয়াইতু আন্ উসকিতা আন্ জিম্মাতী ফারদুজ্জহ্রি, বি-আদায়ি রাকয়াতাই ছালাতিল্ জুমুয়াতি, ফারজুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
(অর্থ: আমি আল্লাহর জন্য ইমামের পেছনে দুই রাকাত জুমার ফরজ নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম।)
বাদাল জুমা (ফরজের পরে) চার রাকাত সুন্নতের নিয়ত:- নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি বাদাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
(অর্থ: আমি আল্লাহর জন্য চার রাকাত বাদাল জুমা সুন্নত নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম।)
হ্যাঁ, মসজিদ ছাড়া জুমার নামাজ পড়া যায়, যদি সেখানে প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণ হয়, যেমন – পর্যাপ্ত সংখ্যক মানুষের সমাবেশ, ইমামের উপস্থিতি, খুতবা প্রদান, এবং সকলের অংশগ্রহণের সুব্যবস্থা। ইসলামের রীতি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া मस्जिद ছাড়া অন্য কোথাও জুমার নামাজ পড়া অনুচিত, তবে এটি নিষিদ্ধও নয়। যদি কোনো স্থানে মসজিদ না থাকে অথবা কোনো কারণে মসজিদে যাওয়া সম্ভব না হয়, তবে খোলা জায়গায় বা উপযুক্ত স্থানে জামাত করে জুমার নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
জুমার নামাজের শর্তাবলি;-
জুমার নামাজ আদায়ের জন্য কিছু শর্ত প্রযোজ্য:- জামাত অপরিহার্য:- জুমার নামাজ অবশ্যই জামাতের সাথে পড়তে হবে এবং এটি একা আদায় করার নিয়ম নেই।
উপযুক্ত স্থান:- জামাত যদি অনেক বড় হয় এবং মসজিদে জায়গা না হয়, তাহলে কোনো খোলা জায়গা বা মাঠেও জুমার নামাজ পড়া যেতে পারে।
ইমাম ও খুতবা:-ইমামের উপস্থিতিতে খুতবা দিতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ একসাথে উপস্থিত থাকতে হবে।
বিশেষ পরিস্থিতিঃ_
মসজিদ না থাকলে:- যেখানে মসজিদ নেই, সেখানে উপযুক্ত স্থানে জামাতের মাধ্যমে জুমার নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
দূরবর্তী মসজিদ:- যদি কেউ এমন জায়গায় থাকেন, যেখানে मस्जिद অনেক দূরে এবং কাজে ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে সেখানে জুমার আয়োজন করা যেতে পারে।
বিশেষ কারণ:- কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণবশত (যেমন, অসুস্থ ব্যক্তি) যদি কেউ জুমার জামাতে উপস্থিত হতে না পারেন, তবে তার জোহরের নামাজ আদায় করতে হবে।
না, কোনো কারণ ছাড়া বাসায় একাকী বা কিছু সংখ্যক লোক নিয়ে জুমার নামাজ পড়া যায় না; জুমার নামাজ আদায়ের জন্য জামাত এবং নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক। তবে, যদি শহরে মসজিদ না থাকে, বা স্বাভাবিক দূরত্বের মধ্যে কোনো মসজিদ না পাওয়া যায়, কিংবা মহামারীর মতো বিশেষ পরিস্থিতিতে মসজিদে যাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে শর্ত সাপেক্ষে বাসায় বা অন্য কোনো স্থানে ইমামসহ কয়েকজন মিলে জুমার নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
যে কারণে বাসায় জুমার নামাজ পড়া যায় না:- জুমার নামাজ জামাত ছাড়া আদায় করা যায় না এবং শুদ্ধ হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির উপস্থিতি প্রয়োজন।
যে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাসায় জুমার নামাজ পড়া যেতে পারে:-
মসজিদ না থাকলে:-
যদি শহর বা উপশহরের আশেপাশে কোনো মসজিদ না থাকে, তাহলে শর্ত সাপেক্ষে জুমার নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
অস্বাভাবিক দূরত্বে মসজিদ থাকলে:-যদি মসজিদ অস্বাভাবিক দূরত্বে হয় এবং যাতায়াত করা সম্ভব না হয়, তাহলে বাড়িতে বা অন্য কোনো স্থানে জুমার নামাজ পড়া যেতে পারে।
মহামারীর মতো বিশেষ পরিস্থিতি:-জীবন ও জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, অর্থাৎ মহামারী বা অনুরূপ কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে মসজিদে যাওয়া সম্ভব না হলে, বাসায় বা অন্য কোথাও জুমার নামাজ পড়া জায়েজ হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:-
(ক) এমন পরিস্থিতিতে জামাতের জন্য ইমামসহ অন্তত চারজন ব্যক্তি উপস্থিত থাকতে হবে।
(খ) জুমার নামাজ আদায়ের সকল শর্ত পূরণ করতে হবে, যেমন – যোহরের সময় হওয়া এবং খুতবা প্রদান করা।
সংক্ষেপে-
সাধারণ অবস্থায়, জুমার নামাজ মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা বাধ্যতামূলক। তবে, জনশূন্য স্থানে বা মসজিদে না যাওয়ার মতো বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে এবং জুমার সকল শর্ত পূরণ হলে তবেই বাসায় বা অন্য কোনো স্থানে এটি আদায় করা যেতে পারে।