বিশেষ প্রতিবেদন
ভারতের উত্তর প্রদেশে নবী মোহাম্মদ (সঃ)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বের হওয়া শোভাযাত্রায় ব্যানার ও পোস্টারে “I Love Mohammad”(sm) লেখার পর তা নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। কানপুরে প্রথম এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয় কিছু হিন্দু গোষ্ঠী দাবি করে, এ ধরনের নতুন স্লোগান ও ব্যানার সামাজিক অশান্তি উসকে দিতে পারে। পুলিশ ব্যানার সরিয়ে ফেলে এবং কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
উত্তর প্রদেশের কানপুর শহরে ঈদে মিলাদ-উন-নবী পালনের সময়ে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার লাগানো নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
এ ঘটনার পর উত্তর প্রদেশের অন্যান্য জেলা—বারেইলি, মোরাদাবাদ, মউ, মোদিনগরসহ বেশ কিছু স্থানে বিক্ষোভ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও পুলিশের লাঠিচার্জের খবর পাওয়া যায়। মহারাষ্ট্রেও এক এলাকায় রঙোলিতে “I Love Mohammad”(sm) লেখার কারণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং ৩০ জনকে আটক করা হয়।
ধর্মীয় অভিব্যক্তি বনাম সামাজিক সংবেদনশীলতা: মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে বলছেন, ভালোবাসা প্রকাশে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। বিপরীতে হিন্দু গোষ্ঠীর একাংশ মনে করে, এ ধরনের লেখা সংবেদনশীল এলাকায় ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।
রাজনৈতিক মাত্রা: বিষয়টি দ্রুত রাজনৈতিক রূপ নেয়। বিরোধী ও ক্ষমতাসীন দল উভয়েই ঘটনাকে ভোট রাজনীতিতে ব্যবহার করতে শুরু করে।
সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা: পোস্টার সরানোর ভিডিও ও পাল্টা স্লোগান যেমন “I Love Ram”, “I Love Mahadev” ভাইরাল হয়ে ঘটনাকে আরও বড় করে তোলে।
পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে এমন যেকোনো কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সমালোচকরা অভিযোগ তুলেছেন, শান্তিপূর্ণ ধর্মপ্রকাশকে অকারণে দমন করা হচ্ছে। বারেইলির বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
মুসলিম নেতা ও সংগঠন: আসাদুদ্দিন ওয়েসি বলেছেন, “ভালোবাসা প্রকাশ অপরাধ নয়। যদি কেউ ‘I Love Mahadev’ লিখে, তাতেও আপত্তি নেই।” তবে মুসলিম জামাতের কিছু নেতা বলেছেন, ধর্মপ্রেম হৃদয়ে রাখা ভালো, তা নিয়ে রাস্তায় প্রতিযোগিতা সঠিক নয়।
রাজনৈতিক দল: কংগ্রেস প্রকাশ্যে বলেছে, ধর্মপ্রকাশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা উচিত।
প্রশাসন: উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “আইন ভঙ্গের চেষ্টা করলে ছাড় দেওয়া হবে না।”
ভারতের মতো বহুধর্মীয় সমাজে ধর্মপ্রকাশ সংবেদনশীল জায়গায় সহজেই উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। তবে সংবিধান মানুষকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। তাই প্রকাশের ধরন, সময় ও স্থান বিবেচনা করেই দায়িত্বশীলভাবে তা করতে হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনেরও উচিত আইন প্রয়োগে নিরপেক্ষ ও সংযত থাকা।
(ক) ধর্মীয় ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখা জরুরি।
(খ) স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটি নেতাদের দ্রুত সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ মেটানো উচিত।
(গ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও উত্তেজনাপূর্ণ প্রচার এড়াতে সচেতন প্রচারণা চালানো দরকার।
(ঘ) রাজনীতির জন্য ধর্মকে হাতিয়ার না করার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা জরুরি।