শিক্ষক কর্তৃক অভিযোগ : উপজেলা চেয়ারম্যানের স্কুল পরিদর্শন
অভয়নগরে স্কুলে গিয়ে টিভিসহ বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকপরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে শিক্ষকদের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার ডুমুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসা: ফিরোজ খাতুন ওই দুই সাংবাদিকের নামে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বিষয়টি জানার পর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ ফরিদ জাহাঙ্গীর মঙ্গলবার ওই বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। প্রধান শিক্ষক ও ওই সহকারী শিক্ষিকার নিকট ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শোনেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার এইচএম জুয়েল রানা ও মিঠুন দত্ত নামে দুইজন সাংবাদিক ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষিকা ফিরোজা খাতুনকে প্রশ্ন করেন, স্কুলের কম্পিউটারটি কোথায়? তখন তিনি বলেন আমার বাসায় রয়েছে, প্রধান শিক্ষক আমাকে কম্পিউটারটি মেরামত করতে দিয়েছেন । বিষয়টি জানার পর ওই দুই সাংবাদিক ওই শিক্ষিকার ভিডিও করেন এবং টিভিতে ওই ভিডিও দেয়ানো হবে বলে নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাদের টাকা দিলে এ সংবাদ বন্ধ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
বিষয়টি সম্পর্কে ওই সহকারী শিক্ষিকা মোসা: ফিরোজা খাতুন বলেন, গত মঙ্গলবার ওই দুইজন সাংবাদিক আমার বিদ্যালয়ে এসে স্কুলের কম্পিউটারটি কোথায় তা জানতে চাইলে আমি বলি প্রধান শিক্ষক কম্পিউটারটি মেরামত করার জন্য আমার কাছে দিয়েছেন। আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওই কম্পিউটারটি এখনও বাজারে নিয়ে মেরামত করাতে পারিনি। এই বলার পর ওরা ক্যামেরা বের করে আমার ছবি তুললো ও টিভির মতো করে ভিডিও করলো এবং বললো আজ রাত ৮টার সংবাদে আপনাকে ৭১টিভি, সময় টিভি, দিগন্ত টিভিতে দেখানো হবে। এসময় একজন সাংবাদিক মোবাইল ফোনে অপরকে বলতে থাকেন, আমরা এইমাত্র একজন ম্যাডামকে নিয়ে একটি ভিডিও পাঠিয়েছি সেটা কী পেয়েছেন?
এক পর্যায়ে তারা বলেন, “আপনার চাকুরির ক্ষতি হবে, এমনকি আপনার চাকুরিও চলে যেতে পারে।” এভাবে আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতে লাগলে, আমি তাদেরকে বলি ভাই আপনারা আমার ক্ষতি করবেননা, আমাকে টিভিতে দেখাবেন না। তখন তারা আমাকে বললো তাহলে এটা বন্ধ করতে হলে উর্ধতন কর্মকর্তাদের টাকা দিতে হবে। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কত টাকা লাগবে? তারা আমাকে বললো অনেক টাকা। এসময় আমার কাছে থাকা ১শ’ টাকা আর অন্যান্য ম্যাডামরা আমাকে ৪শ’ টাকা জোগাড় করে দিলেন। মোট ৫শ’ টাকা আমি ওদেরকে দিতে গেলাম। কিন্তু ওরা আমাকে বললো এত বড় ব্যাপার এই সামান্য টাকায় হবেনা। আমরা আগামীকাল আবার আসবো এই বলে তারা চলে যান তারা ।
পর দিন বুধবার তারা আবারও আমাদের স্কুলে আসলেন। এসে তারা প্রধান শিক্ষকের (পলাশ মল্লিক) কাছে উত্তেজিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন এবং বিভিন্ন কাজের ভাউচার দেখতে চাইলে, প্রধান শিক্ষক সকল কাজের ভাউচার তাদের দেখাচ্ছিলেন। এসময় তারা প্রধান শিক্ষককে বিভিন্ন প্রকার হয়রানীমুলক প্রশ্ন করতে থাকেন। এসময় অত্র স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কমলেশ টিকাদার তাদের কাছে জানতে চান, আপনারা এভাবে স্কুলের কাগজপত্র দেখছেন আবার অহেতুক প্রশ্ন করছেন? আপনারা কে? এসময় তারা কমলেশ টিকাদারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার ছবি তুলতে গেলে, কমলেশ টিকাদারও মোবাইল বের করে তাদের ছবি তুলতে যান। এক পর্যায়ে বিষয়টি মিমাংসা হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পলাশ মল্লিক বলেন, ঘটনাটি সত্য, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত আবেদন পাঠিয়েছি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদ করিম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি যাচাই করে দেখছি।
এসব ঘটনা জানার পর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ ফরিদ জাহাঙ্গীর গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে ওই স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে ঘটনার বিবরণ শোনেন। এবং তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।