1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
৯ ডিসেম্বর শালিখার গলাকাটা ব্রীজে চিরশায়িত ৬ মুক্তিযোদ্ধার শহীদ দিবস ও অজানা কথা - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

৯ ডিসেম্বর শালিখার গলাকাটা ব্রীজে চিরশায়িত ৬ মুক্তিযোদ্ধার শহীদ দিবস ও অজানা কথা

  • সর্বশেষ আপডেট : বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৩১৭ জন খবরটি পড়েছেন

লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল,শালিখা(মাগুরা)থেকে


শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের পার্শ্বে গলাকাটা ব্রীজে চিরশায়িত ৬ মুক্তিযোদ্ধার শহীদ দিবস ৯ ডিসেম্বর।

১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর এই গলাকাটা ব্রীজের পার্শ্বে ৬ মুক্তিযোদ্ধাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে গনকবর দেয়া হয়েছিল যে স্থানটিতে আজও তা সংরক্ষনের কোন ব্যাবস্থা করা হয়নি। বনজঙ্গলে বেষ্টিত স্থানটি আজও অপাঙতেয়ই রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর উত্তীর্ন হলেও শালিখার ছয়ঘরিয়া ও হাজরাহাটিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গনকবর ২ টিতে কোন স্মৃতি সৌধ গড়ে না উঠায় এলাকার জনমনে ক্ষোভের শেষ নেই।

শতখালীর ছয়ঘরিয়া অঞ্চলের কোন লোক বলতে পারে না এই গলাকাটা ব্রীজে কাদের হত্যা করা হয়েছিল। শুধু জানে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকাররা ধরে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করে এখানে কবর দিয়েছিল। স্বাধীনতা প্রাপ্তীর ছিল মাত্র ৭ দিন বাকী। চারিদিকে থৈ থৈ পানি। পার্শে¦ই রামকান্তপুর গ্রামের দক্ষিনের বিল দিয়ে নৌকা বেয়ে চলে যাচ্ছিল এই ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা।

সীমাখালী অঞ্চলের রাজাকাররা খবর পায় রামকান্তপুর বিলের মাঝদিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভিতরে চলে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ধাওয়া করে তাদের ধরে এনে প্রথমে মারপিট করে। পরে এই গলাকাটা ব্রীজের উভয় পার্শে তাদের দিয়ে কবর খোড়ায়ে কবরে শায়িত করে দেয়া হয়। এরপর চলে বেয়নেট চার্জ। পানির তৃষ্ণায় কাতর মুক্তিযোদ্ধাদের পানির আকুতিতে তাদের গালে প্রস্রাব করে দেয়া হয় । পরে গুলি করে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে তাদের কবর ঢেকে দেয়া হয়।

নির্মম এই ঘটনার বিবরণ দেন প্রত্যক্ষর্দশী মাস্টার মকছেদ আলী ।

জায়গাটির নাম গলাকাটা ব্রীজ। শালিখার শতখালী ইউনিয়নের যশোর – মাগুরা সড়কের ছয়ঘরিয়া বটতলার একটু উত্তর পার্শে¦ এই গলাকাটা ব্রীজ। এই ব্রীজের উভয় পার্শ্বে জঙ্গলে ঢাকা ২ টা গনকবর, সেই আমলে যৎসামান্য ইটের গাথুনী দিয়ে বেষ্টনী করে রাখা হয়েছিল। আজ অবধি সেখানে কোন স্মৃতি সৌধ গড়ে তোলা হয়নি।স্বাধীনতার পর তালখড়িতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গনকবরে স্মৃতি সৌধ গড়ে তোলা হলেও ছয়ঘরিয়া এবং হাজরাহাটির গনকবর ২ টি রয়ে গেল অবহেলিতই।

পানির তৃষ্ণায় কাতর মুক্তিযোদ্ধাদের পানির আকুতিতে তাদের গালে প্রস্রাব করে দেয়া হয়

শালিখার গলাকাটা ব্রীজের এই ২ টি গনকবরে যে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা চিরশায়িত তারা হলেন শালিখার বুনাগাতী ইউনিয়নের দেশমুখপাড়া গ্রামের সৈয়দ আকরাম হোসেন,মমিন উদ্দিন মোল্যা ও মান্নান জমার্দ্দার এবং হাটবাড়ীয়া গ্রামের মোঃ আঃ রউফ বিশ্বাস। এছাড়া অন্য ২ জন ছিলেন মোহাম্মদপুর এলাকার।এদের সম্পর্কে আজও সব কিছু অজ্ঞাত। হাটবাড়ীয়া গ্রামের মোহন কমান্ডারের নেতৃত্তাধীনে থেকে এরা সকলেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

বুনাগাতী ইউনিয়নের হাটবাড়ীয়া গ্রামের মোঃ গোলাম মওলানা বিশ্বাসের পুত্র ছিলেন শহীদ মোঃ আব্দুর রউফ বিশ্বাস। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পুর্বে তিনি ছিলেন বুনাগাতী হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৫৪ সালের ২ এপ্র্রিল মাতা বড়– বিবির গর্ভে তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন। তিনিও অবিবাহিত অবস্থায় শহীদ হন। অন্য ২ জন মুক্তিযেদ্ধার খবর আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে যতদুর জানা যায়, তাদের বাড়ী ছিল মোহাম্মদপুর এলাকায়।

স্বাধীনতার ৫০ বর্ষ উত্তীর্ন হয়ে গেলেও আজও এসব শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন টুকু ধরে রাখার কোন ব্যাবস্থা হলো না। সেই আমলে গনকবর ২ টি যৎসামান্য ইটের গাথুনী দিয়ে বেষ্টনী করে রাখা থাকলেও আজ সেই স্মৃতি চিহ্ন টুকুও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যাদের আত্মত্যাগে এ স্বাধীনতা অথচ সেখানে কোন স্মৃতি সৌধ গড়ে না তোলা তাতে কি বর্তমান প্রজন্মের কাছে তাদের সে ত্যাগ অস্বীকার করা হচ্ছে না ? এটা জাতীর কাছে বড় লজ্জার বিষয়।

শালিখার হাজরাহাটি ও গলাকাটা ব্রীজের গনকবরে অচিরেই স্মৃতি সৌধ গড়ে তুলে সবার দৃষ্টিতে আসে এমন নাম ফলক স্থাপন করা হলেই শহীদদের স্মৃতির প্রতি কিছুটা শ্রদ্ধা নিবেদিত হয় বলে এলাকার সচেতন মহল দাবী করেন।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews