বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর গ্রামের কৃষক সন্যাসি মন্ডল ৮ বিঘা জমিতে এবার আমন ধানের চাষ করেছিলেন । ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের আগে মজুর স্বল্পতায় তিনি মাত্র ২ বিঘা জমির ধান বাড়িতে আনতে পারেন। বাকী ৬ বিঘা জমির পাকা ধান বিল খয়রার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শুধু সন্যাসি মন্ডল নয় এভাবে বিঘার পর বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে চাষিদের । ভেসে গেছে মাঠের জমিতে কেটে রাখা বিছালী করা পাকা ধান ।
আজ সরেজমিনে বিল খয়রায় গিয়ে দেখা গেলো চাষিদের দূর্ভোগের চিত্র। পানিতে ভাসমান ধানের আঁটিতে দড়িবেধে কোমর পানি থেকে টেনে রাস্তায় নিয়ে আসছেন তারা। পানি সরে গেলেও সব ধান ঘরে আনা একেবারেই অসম্ভব বলে জানালেন কৃষকেরা। এছাড়া পঁচে ঝরে বিনষ্ট হইয়ে যাবে বিপুল পরিমান পাকা ধান।
পাশাপাশি বিল সোনাকুড়ে আমন ধানের আবাদ করা কৃষক শামছুর রহমানের প্রায় ৬ বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। একই অবস্থা কৃষক চন্ডিচরণ,গনেশ মন্ডল , সন্তোষ মন্ডল সহ অনেক কৃষকের।
সদুল্যপুরের কৃষক রফিকুজ্জামান খাঁন জানান, তার ফুলকপি ক্ষেতে হাটু সমান পানি উঠে গেছে।
বন্দবিলা ইউনিয়নের গাইদ্ঘাট গ্রামের প্রশান্ত বিশ্বাস জানান, তার আলুক্ষেতের ৭৫ শতাংশ বিনষ্ট হয়ে গেছে। একই অবস্থা গাইদ্গাট গ্রামের অনেক কৃষকের।
উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক রুহোল আমিনের ১৪ বিঘা জমির আমন ধানের মধ্যে ঘরে আনতে পেরেছেন মাত্র এক বিঘা জমির ধান । বার ১৩ বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে বিল জ্বলেস্বরের পানির নিচে বলে জানান তিনি। একই রকম কথা বলেন কৃষক ইরাদত শেখ।
এদিকে পাকা ধানের পাশাপাশি তলিয়ে গেছে কৃষকের বোরোধানের প্রায় ৬০ হেক্টর বীজতলা। এর ফলে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বীজের দোকানে দেখা গেছে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের ছোটাছুটি । এই অবস্থায় বীজ ধানের দাম বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে।
অন্যদিকে শীতকালিন সবজির ক্ষতি হয়েছে অনেক । অনেক ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বন্দবিলা ইউনিয়নের সবজি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ গাইদঘাট, সাদিপুর, রাঘবপুর,নারিকেলবাড়িয়ার খানপুর,ক্ষেত্রপালা,দৌলতপুর, ধুপখালী,দয়ারামপুর্ব জয়পুরে সবজি ক্ষেত্যের ক্ষতি হয়েছে অনেক ।
এছাড়া মসুর,সরিষা,গম,সীম, লাউ ও মরিচের ক্ষেত বিনষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে পানি সরে গেলেও সরিষা ও মসুরি ফসল সম্পুর্ন নষ্ট হয়ে যাবে জানান অনেক কৃষক।
নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের উপসহকারি কৃষিকর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, ঘুর্নিঝড় জাওয়াদের কারনে হওয়া অতিবৃষ্টিতে সবজির ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে মসুর,সরিষা,গম,সীম, লাউ , মরিচের ক্ষেতও বিনষ্ট হয়েছে। তিনি জানান, নারিকেল বাড়িয়া ইউনিয়নে ৫ হেক্টর ফুলকপি, ৬ হেক্টর বাঁধা কপি, পিয়াজ ও মরিচের দেড় হেক্টর বীজতলা বিনষ্ট হয়েছে। তাছাড়া বোড়োধানের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ হেক্টর ।
বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহোল আমিন জানান, এবার উপজেলায় ঘূর্নীঝড় জাওয়াদের কারনে কৃষকের আমন ধান, সরিষা,মসুরি ও সবজিসহ বোরোধানের বীজতলার অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির সম্পূর্ণ হিসাব পানি সরে গেলে তথ্য সংগ্রহ করে জানানো হবে।
তিনি জানান, উপজেলায় ২৪৭০ হেক্টর সরিষা, ৯৫০ হেক্টর সবজি, ৩০ হেক্টর গম, ১১২০ হেক্টর মসুর ডালের চাষ হয়েছে।