ডেস্ক রিপোর্ট।।
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১ জন, আহত হয়েছেন ২ শতাধিক । দূর্ঘটনার কয়েকটি হৃদয়ে নাড়া দেয়ার ঘটনা এমন-
ঘটনা-১.
আমি কালেমা পড়েছি , আমি মারা যাচ্ছি বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দিও
‘আমার এক পা উড়ে গেছে। আমি কালেমা পড়েছি। হয়তো আর বাঁচবো না। আমাকে ক্ষমা করে দিও।’ মৃত্যুর আগে বাবাকে ফোন করে এসব কথা বলেছেন মোমিনুল হক (২৫)। তিনি শনিবার (৪ জুন) সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে মারা গেছেন।
মৃত্যুর আগে ছেলের বলে যাওয়া কথাগুলো উচ্চরণ করে হাউমাউ করে কাঁদছেন মোমিনুলের বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ফরিদুল আলম চৌধুরী। তার আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাতে একবার আমাকে ফোন দিয়েছিল মোমিনুল। তখন বলেছিল, বাবা আমাদের কনটেইনার ডিপোতে আগুন লেগেছে। কেমিক্যালের ট্যাংক সব জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। তখন আমি বললাম, তুমি সতর্ক থাকো। ফোন কেটে যাওয়ার পর পুনরায় কল দিলে আর ধরেনি। কিছুক্ষণ পর ছেলে ফোন করে বলে, ‘আমার এক পা উড়ে গেছে বাবা। আমি কালেমা পড়েছি। হয়তো আর বাঁচবো না। আমাকে ক্ষমা করে দিও। এ কথা বলেই ফোন রেখে দেয়।’
ফরিদুল আলম চৌধুরী বলেন, আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। মোমিনুল ছোট। বিএম কনটেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিল। তিন মাস আগে জীবনের প্রথম চাকরিতে যোগদান করেছিল।
সে হাজী মোহাম্মদ মহসীন কলেজে মাস্টার্সের ছাত্র। বাঁশখালী উপজেলার চনুয়া ইউনিয়নে আমাদের বাড়ি। ছেলেকে হারিয়ে আমার সব শেষ হয়ে গেলো। বাংলা ট্রিবিউন
ঘটনা-২.
শ্যালকের লাশ পাশে নিয়ে শ্বশুরকে জামাই- ‘বাবা রানা সুস্থ আছে। একটু আহত হয়েছে, চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে আসব। চিন্তা করবেন না।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর উদ্ধারকাজে যান কুমিরা ফায়ার স্টেশনের কর্মী রানা মিয়া (২৭)। কিন্তু ভয়াবহ বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ১৬ ঘণ্টা পর তাঁর লাশের খোঁজ পেয়েছেন স্বজনেরা।
এর আগে রানা মিয়ার দুলাভাই মো. রাসেল শেখ সীতাকুণ্ড থেকে খোঁজ করতে করতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে আসেন। সেখানে জরুরি বিভাগে আসা ৩৫টি মরদেহ থেকে নিজের শ্যালককে শনাক্তের চেষ্টা করেন। এরপর মুখের দাড়ি, পরনে স্থানীয় একটি ক্লাবের গেঞ্জি দেখে ৩০ মিনিটের চেষ্টায় রানাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন রাসেল শেখ।
রানা মিয়ার বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয়ে। তাঁরা দুই ভাই এক বোন। রানা এখনো বিয়ে করেননি। তাঁর বড় বোনের স্বামী রাসেল শেখ। তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের একজন সিপাহি।
দুই বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন রানা মিয়া। সীতাকুণ্ডের কুমিরা স্টেশনে তিনি কর্মরত ছিলেন। গতকাল শনিবার রাতে বিস্ফোরণের ঘটনায় বুক ও মুখ ছাড়া বাকি দেহ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে রানার। রাসেল শেখ তাঁর মরদেহ যখন শনাক্ত করেন, ওই মুহূর্তে কল দেন রানা মিয়ার বাবা।
মোবাইল ফোনে শ্বশুরের কল দেখে মন শক্ত করেন রাসেল শেখ। স্বাভাবিক থেকে ফোনের ওপাশে থাকা শ্বশুরকে বলেন, ‘বাবা রানা সুস্থ আছে। একটু আহত হয়েছে, চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে আসব। চিন্তা করবেন না।’
রাসেল শেখ বলেন, ‘রানাকে খুঁজতে যে পরিমাণ কষ্ট করতে হয়েছে, আমার চাকরিজীবনে এমন কষ্ট করিনি। কষ্ট হলেও মরদেহ অন্তত পেয়েছি। কিন্তু এখন তার পরিবারকে কী বলব?’
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা উদয়ন চাকমা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের সাতজন কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া চারজনকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। মারা যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজে অংশ নিতে গিয়ে নিহত হন। আজকের পত্রিকা
ঘটনা-৩.
‘ফরহাদ আমাকে বাঁচা, আমি আগুনের মধ্যে আছি’
ফরহাদ আমাকে বাঁচা, আমি আগুনের মধ্যে আছি। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের পর এভাবে ফোনে চাচাতো ভাই ফরহাদের কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন মোমিনুল হক।
শনিবার রাত দেড়টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহ ধরে কান্না করতে করতে ফরহাদ বলছিলেন মোমিনুলের সঙ্গে সর্বশেষ কথোপকথনের এসব কথা।
ফরহাদ বলেন, আমার ভাই মোমিনুল হক আমাকে বাঁচাতে বলেছিলো, আমি বাঁচাতে পারিনি। আমার ভাই পড়ালেখার পাশাপাশি সেখানে চাকরি করতেন। গত কয়েকদিন আগে আমাকে বলেছিলেন, তুই বাড়ি কখন যাবি। তোকে সঙ্গে নিয়ে এবার বাড়ি যাব। এখন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু জীবিত নয় মৃত।
নিহত মোমিনুল হকের চাচা খোরশেদ আলম বলেন, আমার বড় ভাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সেখান থেকেই অবসর নিয়েছেন। বড় ছেলে মহসিন কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স শেষ করে তিন-চার মাস আগে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। সে মহসিন কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে। কিছুই দিন পরে পরীক্ষা হবে। তার পরীক্ষা দেয়া হলো না।
মোমিনুল হক বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া এলাকার মাস্টার ফরিদুল আলমের ছেলে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন মোমিনুল হক। বাংলাদেশ প্রতিদিন