।। স্বজল মন্ডল।।
আমার ছেলেবেলা ছিল বড়ই বেহাল।
সারাদিন কেটে যেতো হেলায়,হেলায়।।
কখনো বা পুকুরে, কখনো খালবিলে, বন্ধুদের সাথে যতো হইচই করে।
চৈত্রের বিকালে বইখানা রেখে,
তড়িঘড়ি খেয়ে দুটো চলিতাম মাঠে।
সূতার নাটাই হাতে উড়াইতাম কত ঘুড়ি।লাল ঘুড়ি, নীল ঘুড়ি, সবুজ ঘুড়ি।
হাতে নাটাই ধরে
চেয়ে থকিতাম আকাশ পানে।
কত সাদা মেঘ উড়ে যেত আকাশেতে।।
আমি শুধু দেখিতাম তাই চেয়ে চেয়ে। দেখিতে দেখিতে বেলা যেতো চলে।
সন্ধ্যার আহবানে সাড়াঁ পড়ে গেছে। পাখিরা সব ফিরছে আপন নীড়ে।
আমি শুধু তাই দেখিতাম চেয়ে চেয়ে।
দেখিয়া ভাবিতাম,
পাখির মতো আমারও হইতো যদি পাখা। মুক্ত আকাশ ঘুরে বেড়াইতাম দিতো না কেউ বাঁধা।
সারা দিন খেলা শেষে ফিরতাম যখন বাড়ি। মা তখন পরিয়ে দিতেন শাসনের বেড়ি।।
সন্ধ্যায় পরিপাটি হয়ে বিছানাতে,
মা তখন লন্ঠন জ্বালিয়ে দিতেন টেবিলেতে।
সারা দিনের ক্লান্তি তখন ঘুমের ভারে আসে। এতকিছুর পরেও আমি পারিতাম না এড়াতে।
একদিকে মায়ের শাসন, অন্যদিকে স্যারের শাসন, সবমিলিয়ে জীবন আমার দুর্বিষহ লাগে।
মাঝে মাঝে মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে যেতো। ভয়ে ভয়ে বলিতাম আমি, ঘুম পড়ছি নাকো।
এক দিকে খুদার জ্বালা অন্য দিকে ঘুম। মা বলতেন আরেকটু পড়ো দিচ্ছি তবে ভাত।
খেয়েই তবেই ঘুমিয়ে পড়ো আর করবো না রাগ।।
তবুও আমার পড়ার ফাঁকে ছবি আঁকা, মনের খেয়ালে গল্প লেখা, নাচ, গান আর ছন্দ লেখা এটাই ছিল সখ।
একদিকে পরিবারের শাসন যেমন, তেমনি ছিল ভালোবাসা।
এর চেয়ে অধিক ছিল অন্যদের পাওয়া ভালোবাসা।
রাগ, অভিমান, শান্তকতা, দৃষ্টু- মিষ্টি ভালোবাসা।
সবকিছুই মিলেই ছিল আমার ছেলেবেলা।