স্টাফ রিপোর্টার, অভয়নগর (যশোর) থেকে।
যশোরের শিল্প ও বাণিজ্য নগরী হিসাবে খ্যাত নওয়াপাড়ায় চালের বাজারে চলছে অস্থিরতা। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ব্যাপক হারে।
চালের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্প শহর নওয়াপাড়াতে রয়েছে ১৫ থেকে ২০টি বড় ধরণের আড়ৎ। এসব আড়তে চালের মজুদ রয়েছে পর্যাপ্ত। এছাড়া বাজারে ১০০ থেকে ১৫০টি রয়েছে খুচরা বেচাকেনার দোকান।
পাইকারি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ব্যাপক হারে। যার মধ্যে মোটা চাল কেজি প্রতি বেড়েছে ৩টাকা। এই চালের দাম ছিল কেজি প্রতি ৪৪টাকা, বর্তমান দর ৪৭টাকা। স্বর্ণা চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৪টাকা। স্বর্ণা চালের দাম ছিল ৪৪টাকা, বর্তমান বাজার দর ৪৮টাকা। বালাম চালের (২৮হিসেবে পরিচিত) দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫টাকা। বালাম চালের দাম ছিল ৪৭টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৫২টাকায়। বাসমতি চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২টাকা। বাসমতি চালের দাম ছিল ৬৮টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৭০টাকায়। মিনিকেট চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬টাকা। মিনিকেট চালের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৫২টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৫৮টাকায়। বাজারে চালের দাম বাড়ার বিষয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না আড়তদাররা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চাল ব্যবসায়ী জানান, নওয়াপাড়া শহরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় যশোরের শার্শার মেসার্স গোল্ড অটো রাইচ মিলের উৎপাদিত চাল। এই মিল থেকে নওয়াপাড়ার চারজন আড়তদার মেসার্স সুশান্ত কৃষ্ণ রায়, মেসার্স সমীর সাহা অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স কল্পনা টেডার্স এবং মেসার্স বাচ্চু অ্যান্ড ব্রাদার্স সব ধরণের বিপুল পরিমাণ চাল কিনে তা বাজারে বিক্রি করে আসছেন।
জানা গেছে, এই চার আড়তদারদের মাঝে সরাসরি মেসার্স গোল্ড অটো রাইচ মিল থেকে নিজ খরচে (যাতায়াত খরচ) চাল সরবরাহ করা হয়। অপরদিকে বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা মিল রেটে শার্শার ওই গোল্ড অটো রাইচ মিল থেকে চাল কিনে আনতে হয়। যার কারণে এই চারটি আড়ৎ থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা চড়া দামে চাল কিনে তা ক্রেতাদের মাঝে সরবরাহ করে থাকেন। এককভাবে এই চারটি প্রতিষ্ঠানের আড়তদারগণ আড়তে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুদ করে একচেটিয়াভাবে চালের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপর একজন চাল ব্যবসায়ী জানান, একটি ট্রাকে ৮০০বস্তা চাল কিনে আনতে সব ব্যবসায়ী পারেন না, তাই এই চারজন আড়তদার ট্রাক ভর্তি করে মেসার্স গোল্ড অটো রাইচ মিল থেকে চাল এনে তা বাজারে সরবরাহ করছেন দেদারছে। তিনি আরও জানান, নওয়াপাড়া শহরের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এবং কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম কম থাকার সময়ে বিপুল পরিমাণ চাল কম দামে কিনে অবৈধভাবে নিজ বাড়িতে বা গুদামে মজুদ করে রাখেন। যার ফলে অনেক সময় বাজারে চালের সংকট দেখা দেয়।
চালের দাম বাড়ার কারণ কী? জানতে চাইলে একজন চাল ব্যবসায়ী জানান, মেমো দেখে চাল বেচাকেনা করি। বেশি দামে কেনার ফলে বেশি দামে বিক্রি করি। দাম বাড়ার বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে মোটা ও স্বর্ণা চালের বেচাকেনা হয় সবচেয়ে বেশি। দু:স্থ ও গরীব পেশার মানুষেরা এই চাল কেনেন বেশি। চালের দাম বেশি হওয়ায় গরীব শ্রেণির মানুষ চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বাজারে চালের দাম বাড়ার বিষয়ে আড়তদার মেসার্স সমীর সাহা অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক সমীর সাহা জানান, বাজারে ধানের দাম বাড়তি, সেই তুলনায় চালের দামতো কম। অপর আড়তদার মেসার্স সুশান্ত কৃষ্ণ রায়ের মালিক সুশান্ত কৃষ্ণ রায় জানান, মিল থেকে যেভাবে কেনা, সেভাবেই বিক্রি করছি। তবে চালের দাম কমের দিকে যাচ্ছে।
বাজারে চাল কিনতে আসা ধোপাদি গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বাচ্চু জানান, চালের দাম বাড়ার বিষয়টি সরকারি প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিৎ। তাছাড়া চালের বাজারে নজরদারি বাড়িয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে অসাধু ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তিনি।
–