।। লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল ।।
যশোর সদরের ইছালী ইউনিয়নের কামার গন্না গ্রামের সোহরাব উদ্দিন শুধু মুক্তিযোদ্ধাই নয় আদর্শ শিক্ষক,কৃষক সংগঠক ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ঠ অবদান রেখে চলেছেন। ১৯৪৭ সালের ৬ জানুয়ারী জন্ম(সার্টিফিকেট অনুযায়ী)। পিতা মৃত নুর আলী মোল্লা। মাতা কুলছুম বিবি। শৈশবে পিতা মারা যান। ৫ ভাই বোনের মধ্যে সোহরাব উদ্দিন সবার বড়। ইছালী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে পঞ্চম শ্রেনী উত্তীর্ন হওয়ার পর হাসিমপুর জুনিয়র মাদ্রাসায় ভর্তি হন। মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেনী পাশ করার পর যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউট স্কুলে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। পরে খা্জুরা এম এন মিত্র হাইস্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ না থাকায় দশম শ্রেণীতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাশ করেন।
আর্থিক সংকটে লেখাপড়া আর হয়নি। ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর কোদালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে যশোর থেকে পিটিআই পাশ করে ১৯৭৫ সালে ঘুরুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে ইছালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী হন।
১৯৯০ সালে ইছালী গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ী থেকে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হলে মামলায় ১০ বছর ৫ মাস সাজা হয়। ৫ বছর ১ মাস পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে হাইকোর্ট থেকে মামলায় বেকসুর খালাস পেয়ে পুনরায় ইছালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর পুর্বের সকল বকেয়া বেতন বুঝে পান। ২০০৫ সালের ৫ জানুয়ারীতে তিনি অবসর গ্রহন।
১৯৭১ সালে ভারতের বনগাঁ টালিখোলা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যোগদান করার পর ভারতের বারাকপুর প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। এরপর হায়ার ট্রেনিং এ ভারতের রামপুরহাট থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে বনগাঁ ফিরে এসে অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের ঝিকরগাছা থানার রাধানগর ক্যাম্পে অবস্থান করেন। ঐ সময় মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন ১১ জন। কমান্ডার ছিলেন শেখহাটি গ্রামের হোসেন আলী। এরপর রকেট জলিলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঝিকরগাছার বেনেয়ালী রাজাকার ক্যাম্পের সঙ্গে যুদ্ধ হয়। রাজাকার ক্যাম্প দখল হওয়ার পর ঐ এলাকার পলুয়ার মাহমুদপুরেও যুদ্ধ করতে হয়।
পরে নিজ এলাকার মনোহরপুর,ফুলবাড়ী, খাজুরা ও বাঘারপাড়ার রাজাকার ক্যাম্পের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়। বাঘারপাড়ায় সঙ্গীয় তিনজন মুক্তিযোদ্ধা রতন,শামছু ও বোলো গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে নিতে না পারায় রাজাকাররা তাদের জীবিত মাটি চাপা দেয় বলে শুনতে পান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ম্যালেশিয়া ক্যাম্পে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করেন।
১৯৭১ সালের পর তিনি রাজনীতিতে ভাসানী ন্যাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮০ সালে কৃষক সংগ্রাম সমিতির জাতীয় সম্মেলনের পরে যশোর জেলা কমিটি গঠন হয়। ঐ কমিটির সভাপতি মাষ্টার ইমান আলী এবং সাধারন সম্পাদক পদে সোহরাব উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়া হয়। ঐ পদে থেকে তিনি কৃষকের বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়। এরপর ঐ কমিটির সভাপতি যখন আঃ খালেক লস্কর তখন তিনি সহ-সভাপতি হিসাবে কাজ করতে থাকেন। দলে যখন অনেক রাজনৈতিক সুবিধাবাদীর জন্ম হয় তখন তিনি সাম্রাজ্যবাদ,সামন্তবাদ, মুৎসুদ্দি পুজি বিরোধী অবস্থান নিয়ে কৃষকের ডহুরী আন্দোলনসহ বহু আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন।
কৃষক সংগঠক হিসাবে তিনি গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রের বিশেষ উপদেষ্টা হিসাবে বহু কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সমস্যা সমাধানে অংগ্রহন করেন। কৃষক সংগঠক আইয়ূব হোসেনের সহযাত্রী হিসাবে গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রের সম্পৃক্ত হয়ে গাইদঘাট, নোঙ্গরপুর,লেবুতলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিষমুক্ত সব্জি উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও সহায়তা করেন। নিজগ্রামে একটি প্রাইমারী স্কুল ও একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুল গড়ে তোলেন। খাদ্য অভাব মিটাতে সমিতির মাধ্যমে ২টি গভীর নলকুপ স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে গ্রাম উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন।