1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. suma59630@gmail.com : ফাতেমা আকতার তোয়া : ফাতেমা আকতার তোয়া
  3. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  4. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
  5. wasifur716@gmail.com : Wasifur Rahaman : Wasifur Rahaman
বাংলাদেশের সর্বজনস্বীকৃত বরেণ্য কৃ্ষি বিজ্ঞানী কাজী পেয়ারার জনক ড. এম কাজী বদরুদ্দোজা - বিডিটেলিগ্রাফ | Bangla News Portal, Latest Bangla News, Breaking, Stories and Videos
বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ১১:২০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

বাংলাদেশের সর্বজনস্বীকৃত বরেণ্য কৃ্ষি বিজ্ঞানী কাজী পেয়ারার জনক ড. এম কাজী বদরুদ্দোজা

  • সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১৪৪ জন খবরটি পড়েছেন

।। লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল।। আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে যে সফলতা এর মূলে যে ক’জন হাতে গোনা কৃষিবিজ্ঞানীর নাম শ্রদ্ধাভরে উচ্চারণ করতে হয় তাদের মধ্যে পুরোধা ব্যক্তি হচ্ছেন ড. এম কাজী বদরুদ্দোজা। তিনি বাংলাদেশের কৃষির এক উজ্জ্বল ধ্রুবতারার মত দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের জন্য পথ প্রদর্শক হিসাবে অদ্যাবধি কাজ করে চলেছেন। তিনি বাংলাদেশের কৃষি গবেষণার গোড়া পত্তনকারী হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। তাঁর নানামুখী কর্মকান্ডের মধ্যে বাংলাদেশে সমন্বিত কৃষি গবেষণার সিস্টেম (এনএআরএস) প্রবর্তন , বহু গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা, কৃষি গবেষণায় দক্ষ জনবল সংগ্রহ ও তৈরি করা ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মোট কথা যুদ্ধবিধ্বস্ত খাদ্য সংকটে নিমজ্জিত সদ্য স্বাধীন কৃষি প্রধান বাংলাদেশের উপযোগী কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পথিকৃত।

ড. কাজী বদরুদ্দোজার পুর্বপুরুষ এসেছিলেন মীরাটের নবাব বংশ থেকে। ১৯৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলার মাটিতে। এ দেশের মাটি ও মানুষ আপন করে নিয়েছিল তাকে। তিনিও মিশে গিয়েছিলেন এদেশের মাটি ও মানুষের সাথে। তার উত্তরসুরীরা গাইবান্ধার সবুজ শ্যামলীমায় বেড়ে উঠা বাঙ্গালী। সেই পরিবারে ১৯২৭ সালের ১লা জানুয়ারী ড. কাজী বদরুদ্দোজার জন্ম। ১৯৪২ সালে তিনি গাইবান্ধা জেলার গবিন্দগঞ্জ হাইস্কুল থেকে বিরল কৃতিত্ব, ইংরেজী ভাষায় ‘লেটার‘ সহকারে মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন হন। রাজশাহী গভণর্মেন্ট কলেজ থেকে তিনি আই,এস,সি ,উপমহাদেশের প্রথম কৃষি কলেজ তেজগাঁওস্থ বেঙ্গল এগ্রিকালচার ইনিস্টিটিউট থেকে ১৯৪৮ সালে বি এজি;ও ১৯৫২ সালেএম এজি ডিগ্রী লাভ করেন। অধুনালুপ্ত ঢাকা ফার্ম সংলগ্ন এগ্রিকালচার রিসার্চ লেবরেটরীতে ড. এম কাজী বদরুদ্দোজার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। চমকপ্রদ ব্যক্তিত্বের মাঝে পেশাগত পান্ডিত্য ও নেতৃত্বের সুসমন্বয় লক্ষ্য করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে মার্কিন দেশে উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রেরণ করেন। ১৯৫৬ সালে লুইজিয়ানা ইউনির্ভাসিটি থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং কৃষি গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন।

১৯৫৭ সালে ড. এম কাজী বদরুদ্দোজা ইকোনোমিক বোটানিষ্ট(ফাইবার) পদ অলংকৃত করেন। সেদিনের কৃষকের
কাছে স্বল্প পরিচিত ফসল গম ও ভুট্টা গবেষনা তার নেতৃত্বে বেগবান হয়ে ওঠে। উদ্ভিদ প্রজননে সুদক্ষ কলা কৌশল আয়ত্ত করার জন্য তিনি সুইডেন এর বিশ্বখ্যাত স্তালভ গবেষনা কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ লাভ করেন, ল্যান্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ডিপ-ইন জিনেটিক্স উপাধী অর্জন করে ১৯৬১ সালে দেশে ফিরে নতুন উদ্যোমে কৃষি গবেষনায় মনোনিবেশ করেন। বাংলাদেশে ব্যাপক গম উৎপাদনের সম্ভাবনা তার বিজ্ঞানী দুরদৃষ্টিতে স্থায়ী আসন করে নেয়। পরবর্তীকালে পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালক,নির্বাহী পরিচালক ও মহাপরিচালকের দায়িত্বে আসীন হয়ে তিনিই প্রথম বাংলাদেশে উচ্চ ফলনশীল গম প্রর্বতন করার উদ্যোগ নেন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তার বলিষ্ঠ উদ্যোগ ও পুর্ব পাকিস্থানে সে সময়ের ইকোনোমিক বোটানিষ্ট(ফাইবার) ডঃ হাসানুজ্জামানের নেতৃত্বে উচ্চ ফলনশীল গম গবেষনা বাংলার কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দেয়।এর ফল হিসাবে এদেশের কৃষক আজ উচ্চ ফলনশীল গম আবাদ করে খাদ্য ঘাটতি কমাতে সক্ষম হয়েছে।

১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধবস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে আরো বিধ্বস্ত এদেশের কৃষি গবেষনাকে নতুন করে দাঁড় করানোর দায়িত্ব নেন ড. এম কাজী বদরুদ্দোজা। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে গড়ে উঠে জয়দেবপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট(বারি) এরমত বিশাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তিনিই “বারি“র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৪ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব মুহুর্ত অবধি ড. এম কাজী বদরুদ্দোজা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদ অলংকৃত করেনএবং তার উদ্যোগের ফলেই প্রতিষ্ঠিত হয় সাভারে বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষনা ও ময়মনসিংহের মৎস গবেষনা ইনস্টিটিউট, সালনার ইনস্টিটিউট ফর পোষ্ট গ্রাজুয়েট ষ্টাডিজ ইন এগ্রিকালচার(ইপসা)। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিকে একসুত্রে গেঁথে এদেশের কৃষি ও কৃষকের প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে সামগ্রিক কৃষি গবেষনাকে সুসমন্বিত করার উদ্দেশ্যে ড. এম কাজী বদরুদ্দোজার অবদান ছিল অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ।

শুধু কৃষিতেই ড. এম কাজী বদরুদ্দোজার কর্মবিস্তৃতি সীমা বদ্ধ থাকেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বা সিনেটে এবং বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের উপদেষ্টা বোর্ডে তিনি দুরদৃষ্টি সম্পন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। সাউথ এশিয়ান এসোশিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন (সার্ক) গঠনের সময় এগ্রিকালচার গ্রুপের সভাপতি হিসাবে ড. বদরুদ্দোজার সুদক্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য এনেছে বিরল কৃতিত্ব। ফিলিপাইনের আর্ন্তজাতিক ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট(ইরি) এর মুল্যায়ন বোর্ড -এর সদস্য হিসাবে লন্ডনের ট্রপিকাল প্রোডাক্টস ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা কমিটিতে, নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত ইন্টারন্যশনাল সার্ভিস অব ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ(ইজনার)এর বোর্ড অব ট্রাষ্টীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. বদরুদ্দোজার অবদান দেশের জন্যে এনেছে দূর্লভ খ্যাতি। প্রচার বিমুখ নিবেদিত চিত্ত এ বিজ্ঞানীর এদেশের মানুষের জন্য আরো দুটি উল্লেখযোগ্য অবদানঃ অতি সুস্বাদু আম্রপলী আমের আর সুর্দশনীয় ও সুস্বাদু কাজী পেয়ারা জাত থাইল্যান্ড থেকে এনে এদেশে প্রবর্তন করেছেন । আর কাজী পেয়ারা তাঁর নামানুসারে এই পেয়ারার নাম করণ করা হয়েছে কাজী পেয়ারা।

এদেশের কৃষি উন্নয়নের জন্য নিবেদিত প্রাণ এই কৃষি বিজ্ঞানী পাকিস্তানী শাসনামলে তৎকালীন ঢাকাস্থ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে তাঁর কর্মজীবন শুরু কর্ধেসঢ়; তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৭ সালে ড. বদরুদ্দোজা ইকোনোমিক বোটানিস্ট (ফাইবার) পদ অলংকিত করেন। সে সময় আমাদের কৃষকের কাছে গম ও ভুট্টা ছিল স্বল্প পরিচিত ফসল। কিন্তু এই দুরদর্শী মানুষটি তখনই দেশের খাদ্য সংকট নিরসনে গমের গুরুত্ব অনুধাবন করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল রিসার্স কাউন্সিলের পরিচালক, নির্বাহী পরিচালক ও মহা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রথম এদেশে উচ্চ ফলনশীল গম উৎপাদনের উদ্যোগ নেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (নধৎর) যার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসাবে ১৯৭৪-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত গৌরবের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর দায়িত্ব পালন কালে এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বিভিন্ন ফসলের বিশেষ করে গমের অনেকগুলো উন্নত জাত এদেশের কৃষকদের হাত তুলে দিয়েছেন যা দেশের দানাদার খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি তথা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালক করেছে।

এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ পশু সম্পদ (বর্তমানে প্রানি সম্পদ) গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজৃয়েট স্টাডিজ ইন এগ্রিকালচার (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ^বিদ্যালয়)। সার্ক গঠনের সময় এগ্রিকালচার গ্রুপের সভাপতি হিসাবে তাঁর রয়েছে সুদক্ষ নেতৃত্ব। এই স্বনাম ধন্য বিজ্ঞানী দেশের বাইরেও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ওজজও), ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস অব ন্যাশনাল এড়্রকিালচার রিসার্চ (ঞঝঘঅজ) সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দক্ষতা ও সুনামের সাতে পালন করেন। এই ক্ষণজন্মা বিজ্ঞানী তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কৃষিতে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অনেকগুলো পুরস্কার, খেতাব ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৮৫ সালে সরকার জাতীয় পর্যায়ে তাঁকে আজীবন এমিরিটাস বিজ্ঞানী সম্মানে ভূষিত করে। অবশেষে ৯৬ বছর বয়সে ২০২৩ সালের ৩০ আগষ্ট ঢাকার উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

যশোরের বাঘারপাড়ার “গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র“ ২০১২ সালের ৯,১০ও ১১ই মার্চ ৩ দিন ব্যাপি খাজুরা এম এন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে গ্রামীন জীবনযাত্রা ও কৃষি প্রযুক্তি তথ্য,বীজ মেলার অনুষ্ঠান করে। এই অনুষ্ঠানে দেশের ৩০ জন গুনীজনের সম্মাননা প্রদান করা হয়। ওই সময় জীবদ্দশায় গুনীজন সম্মাননার মধ্যে জাতীয় বরেণ্য কৃষি বিজ্ঞানী ড.এম কাজী বদরুদ্দোজা ছিলেন অন্যতম একজন।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2025
Theme Customized By BreakingNews